অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই রিভিউ শেখ মুজিবুর রহমান
- বইয়ের নাম:অসমাপ্ত আত্মজীবনী
- লেখক : শেখ মুজিবুর রহমান
- প্রকাশনী : ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড
- পৃষ্ঠাঃ ৩৩০
যুগ হতে যুগান্তরে যার হাত ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের পথ চলা, যার রক্তে আগুন জলা কণ্ঠে এদেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধে। যিনি ছিলেন বাঙালি জাতির গর্ব ও বীরত্বের প্রতীক। সেই মহান মানুষ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি।
বইটি শুধুমাত্র আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ নয়। এই বইটিতে ফুটে উঠেছে শেখ মুজিবুর রহমানের উচ্চ মানের সাহিত্য প্রতিভা,উঠে এসেছে বহুমাত্রিক আবেদন।তাছাড়াও একজন সাধারণ মানুষ থেকে পূর্ব বাংলার মুক্তিকামী মানুষের আলোর দিশারী হয়ে উঠার গল্পে ভরপুর এই বইয়ের প্রতিটি পাতা।
প্রথম অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন গ্রামের দুরন্ত একজন কিশোর মাত্র। এরপর হয়ে উঠেন মুসলিম লীগের এক সাধারণ কর্মী। আর এই সাধারণ কর্মী থেকেই হয়ে উঠেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে যতটুকুই চিনুক না কেনো বঙ্গবন্ধুর এই মহান নেতা হওয়ার পিছনের কাহিনী বলতে গেলে আমাদের কারোরই জানা নেই।
যারা দেশের ইতিহাস জানতে চায়, যারা রাজনীতি করে বা করতে চায় বা যারা দেশ শাসন করে বা করতে চায় তাদের সবারই আসমাপ্ত আত্মজীবনী বই টি অবশ্যই পড়তে হবে।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি হচ্ছে সেই বই যেখানে বর্ণিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কৈশোরের কথা, বর্ণিত হয়েছে তার সফলতার গল্প, বর্ণিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের গল্প, তার উদারতার কাহিনী।
এগুলো ছাড়াও বর্ণিত হয়েছে, এক দুঃসাহসী এক তরুণের গল্প যার কঠিন সময়ও মনোবল ভেঙে যায়নি।
এছাড়াও বইটিতে শেখ মুজিবুর রহমান উল্লেখ করেছেন তার সহকর্মীদের দুঃসাহসীকতার কথা, তার পরিবারের কথা, তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কথা সব মিলিয়ে বইটিকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়।
এই বইটিকে বলা যেতে পারে ১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশের রাজনীতির অনবদ্য এক দলিল।
বইটিতে শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। যদিও ১৯৩৬ সালে বঙ্গবন্ধু সুভাষ বসুর ভক্ত হয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন কিন্তু রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে প্রবেশ করেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর মাধ্যমে।
তাই,সোহরাওয়ার্দীকে বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক গুরু হিসেবে বইয়ে উল্লেখ করেছেন। সোহরাওয়ার্দীর সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, এই স্থানের স্নেহ,ভালবাসা ও নেতৃত্বের কারণে তিনি বড় হয়েছেন এবং কাজ করতে শিখেছেন।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে থাকা অবস্থায় লিখেছিলেন। এই বইটিতে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর কথাও চমৎকার ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
আসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি রচিত হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ২০০৪ সালে চারটি খাতা জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় খুঁজে বের করেন। যা পরবর্তীতে ২০১২ সালে “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” নামক গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
বইটি পড়লেই আপনি বুঝাতে পারবেন যে একজন মানুষ কিভাবে একটা জাতি হয়ে উঠে আর একটা জাতি কিভাবে একটা দেশ হয়ে উঠে।আসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়লেই আপনি আরও বুঝাতে পারবেন বঙ্গবন্ধুর মতো এমন একজনের জন্ম না হলে তাহলে আজকের এই বাংলাদেশের অবস্থা কি হতো।
দেশের ও দেশের মানুষের জন্য তাদের স্বাধীনতা জন্য নিজের জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন এই মহান মানুষটি। আর তাইতো তার উপাদি ছিল বঙ্গবন্ধু, অর্থাৎ বাংলার বন্ধু।
কাহিনী সংক্ষেপিত:
ফরিদপুর জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু তার আগে তাকে অনেক ।বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। একাধিকবার স্কুল থেকে ছিটকে পড়েছেন । বদল করেছেন একাধিক স্কুল। স্কুলে থাকা কালীন অবস্থায় জড়িয়ে যান রাজনীতির সাথে।
১৯৪৩ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলো পাকিস্তান। সবাই ভেবেছিল যুদ্ধ হয়তোবা শেষ। কিন্তু একি হলো যুদ্ধতো শেষ হয়নি, যুদ্ধতো মাত্র শুরু হলো।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবার পর পরই শুরু হলো ষড়যন্ত্রের নতুন রাজনীতি। শুরু হলো দুর্গম পথচলা, জেলখাটা ও একে অন্যকে পুড়িয়ে ছারখার করার পাঁয়তারা। এরপর শুরু হলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
আর সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আর বইটিতে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে সুনিপুণভাবে।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি বিশ্বব্যাপী ইংরেজি, জাপানি, আরবি, ফরাসি, হিন্দি ও তুর্কি ভাষা সহ আরো নানান বিদেশি ভাষায় এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়।
তবে বইটি শেষ হয়েছে কিছুটা অতৃপ্তির মধ্য দিয়ে। কারণ এই বইয়ের কোনো উপসংহার নেই।
যদিও বর্তমান তরুণ সমাজ বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি কিন্তু অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়ে তরুণ সমাজ বঙ্গবন্ধুকে উপলব্ধি করতে পারবে।