বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বর্ণনা(অনুচ্ছেদ রচনা)

বন্ধুরা এখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বর্ণনা(অনুচ্ছেদ রচনা) দেওয়া হল-
ভূমিকা :
প্রত্যেক দেশের জাতীয় পতাকা ঐ জাতীয় অখও স্বাধীনতা , আশা – আকাঙ্ক্ষা , সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক । জাতীয় পতাকারসম্মান সর্বোচ্চ , জাতীয় পতাকা পরম পবিত্র একটি বস্তু দেশমাতৃকার মতোই পূজনীয় । পৃথিবীর কত পরাধীন জাতি প্রাণের মূল্যেবুকের রক্ত দিয়ে নিজেদের জাতীয় পতাকা অর্জন করেছে । আর কত স্বাধীন জাতি বিপর্যয়ের মুখে তাদের জাতীয় পতাকার জন্যঅশেষ নির্যাতন সহ্য করেছে –অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে । যে জাতির জাতীয় পতাকা বহন করার শক্তি থাকে না তাদেরপরাধীনতার গ্লানি সহ্য করতে হয় । জাতীয় পতাকা সামান্য এক খণ্ড বস্ত্র মাত্র নয় । এটি সমগ্র জাতির প্রাণে উদ্দীপনা ওপ্রেরণার উৎস ।
স্বাধীনতার প্রতীক :
আমাদের দেশ আজ স্বাধীন । আমরা স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিক । আমাদের পতাকার পবিত্র অস্তিত্বঘোষণা করতে গিয়ে মহামূল্য দিতে হয়েছে দেশের মানুষকে । পৃথিবীর জঘন্যতম অত্যাচারে আত্মবলী ও মহান ত্যাগের সঙ্গেআমাদের জাতীয় পতাকা অর্জনের গৌরবদীপ্ত স্মৃতি বিজড়িত স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে আমাদের একটা পতাকা ৰা নিশানআছে — ইহাই আমাদের জাতীয় পতাকা । ঘন সবুজের মাঝখানে আছে রক্তিম বৃত্তটি , স্বাধীনতার নতুন সূর্যের প্রতীক । সবুজঅংশটি তারুণ্যের উদ্দীপনা ও গ্রামবাংলার বিস্তৃত সবুজ পরিবেশের প্রতীক । শস্য – শ্যামল নয়নাভিরাম আমাদের সোনারবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । আমাদের জাতীয় পতাকা যেন সেই রূপটাই ধারণ করে আছে ।
আমাদের পতাকার ম্যাপ :
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতীয় পতাকার আকার এবং রং কীরূপ হবে তা ঘোষনা করেছিলেন । পতাকা তৈরির ব্যাপারেনিচের নিয়ম – কানুন চলতে হবে ।
১. জাতীয় পতাকা হৰে আয়তাকার ।
২. পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত হবে ১০:৬ ।
৩. পতাকার মাঝের লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের ৫ ভাগের ১ ভাগ ।
৪. পতাকার দৈর্ঘ্যকে সমান ১০ ভাগে ভাগ করতে হবে ।
৫ , পতাকার প্রস্থকে সমান দুভাগে ভাগ করতে হবে এবং প্রত্যেক ভাগকে একটি করে ইউনিট ধরতে হবে । পতাকার দৈর্ঘ্যের ডানদিকে সাড়ে পাঁচ ইউনিট এবং বাম দিকে সাড়ে চার ইউনিট রেখে একটি লম্বা রেখা টানতে হবে এবং প্রস্থকে সমান দুভাগে ভাগকরে একটি করে সমান্তরাল সরলরেখা টানতে হবে । এ দুই রেখা যেখানে মিলিত হবে সেটাই হবে পতাকার লাল বৃত্তটির কেন্দ্রবিন্দু। সরকারি ও বেসরকারি ভবনের জন্য পতাকার বিভিন্ন আকার নিম্নরূপ হবে । ক দৈর্ঘ্য ১০ ফুট প্রস্থ ৬ ফুট দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও প্রস্থ ৩ফুট গ , দৈর্ঘ্য ২২ ফুট ও প্রস্থ ১২ ফুট । মোটর গাড়ির জন্য দৈর্ঘ্য ১৫ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৯ ইঞ্চি । য , দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৬ ইঞ্চি ।
ব্যবহার :
জাতীয় পতাকা যত্রতত্র যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা যায় না এবং ব্যবহার করাও উচিত নয় । জাতীয় পতাকা ব্যবহার সম্বন্ধেসাধারণত কতকগুলো নিয়ম আছে । কোথাও জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হলে সঙ্গে সঙ্গে দাড়িয়ে একে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। কোনো ছবি , প্রতিফলক বা অন্য কোনো পতাকা জাতীয় পতাকার উর্ধ্বে বা এর দক্ষিণ পাশে বসানো চলবে না । অন্য কোনোপতাকার সঙ্গে জাতীয় পতাকা থাকলে জাতীয় পতাকাই সর্বোচ্চে স্থাপিত হবে । মিছিল ও শোভাযাত্রায় পতাকা সর্বাগ্রে থাকবেএবং বাহককে দক্ষিণ কন্ধে তা উঁচু করে বহন করতে হবে । সাধারণত সরকারি ভবনে এবং সীমান্ত অঞ্চলের বিশেষ বিশেষ স্থানেএ পতাকা উড়ানো হয় তবে রাষ্ট্রীয় উৎসবের দিনে যেমন –২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস , ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ইত্যাদিতে এপতাকা ব্যবহারে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না ।
নির্মিতি ইতিহাস :
আমাদের জাতীয় পতাকার একটি ইতিহাস আছে । প্রথমেই এ পতাকা ত্রিবর্ণরঞ্জিত সবুজ জমিনে লাল বৃত্ত , আর এ রক্তিম বৃত্তেছিল সোনালি ম্যাপ । ১৯৭১ সালের ২ মার্চ বাংলাদেশের সর্বত্র মহাসমারোহে পতাকা উত্তোলিত হয় । তারপর ১৯৭১ সালের ৭মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক জনসমাবেশে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের এ পতাকা উত্তোলন করেন । এরপর হতেবাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামের সময় পর্যন্ত এবং স্বাধীন বাংলায়ও কিছুকাল এ পতাকা প্রচলিত ছিল । তারপর গণপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশ সরকার জাতীয় পতাকার আকার ও রং মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে নির্ধারিত করেন । এ দিনে রবীন্দ্রনাথের ‘ আমারসোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ‘ কবিতার প্রথম দশ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও নজরুলের ‘ চল্ চল্ চল্কবিতার প্রথম ২১ লাইন রণসঙ্গীতরূপে ঘোষিত হয় । ঘোষণা অনুযায়ীই আমাদের পতাকা পরিকল্পিত ।
সম্মান প্রদর্শন :
জাতীয় পতাকার জন্যে আমরা যথার্থই গৌরব করে থাকি । এর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করাও আমাদের জাতীয় কর্তব্য ।স্কুল , কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে তাকে অভিবাদন করতে শিক্ষা দেওয়া হলো।জাতি ও দেশেরমান – মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব একদিন যাদের ওপর পড়বে , তাদেরকে শৈশব হতেই জাতীয় পতাকার যথার্থ মর্যাদা উপলব্ধি অবশ্যইকরতে হবে । তা না হলে তারা দেশপ্রেমের শিক্ষা পাবে কেমন করে ? ছাত্ররাই জাতির ভবিষ্যৎ । একদিন তাদেরকেই তো দেশেরমর্যাদা – জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে ।
উপসংহার :
বহু দুঃখ – কষ্টে এবং রক্তের বিনিময়ে আমরা এ পতাকার অধিকার হয়েছি । এমন একদিন ছিল তখন আমরা এ পতাকাযথেচ্ছাভাবে ব্যবহার করতে পারি নি । কারো নিকট এ পতাকা পেলে গুলি করে হত্যা করা হত । ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরআমরা বিজয়ী হয়েছি । সেই বিজয় ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে আমরা প্রাণ ভরে আমাদের সাধের পতাকাটি উড়িয়েছি । এপতাকা আমাদের সমগ্র জাতির পরম আদরের ধন – পতাকার সম্মান – জাগ্রত জাতির সম্মান । আমাদের গৌরব এ পতাকাটিচিরদিন অম্লান রাখতে হবে।