আমার জীবনের লক্ষ্য / তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
ভূমিকা :
মানুষের জীবনে নিজস্ব একটা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে । লক্ষ্যহীন মানুষ কান্ডারীহীন নৌকার মতো ভেসে বেড়ায় । জীবনেরপ্রস্তুতি লগ্নে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে সাধনায় আত্মনিয়োগ করা আবশ্যক । বিচিত্র এই জগতে অসংখ্য কর্ম রয়েছে । অসংখ্যকর্মের মধ্যে রুচি ও সামর্থ্য অনুসারে যেকোনো একটিকে প্রধানরূপে বেছে নেয়াই হলো জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য । নাবিকরাযেমন ধ্রুবতারাকে লক্ষ্য করে বিশাল সমুদ্রে পাড়ি জমায় , তেমনি আমাদেরকে লক্ষ্য স্থির করে জীবন সমুদ্রে পাড়ি জমাতে হবে ।জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তুলতে হলে জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য স্থির করা একান্তই প্রয়োজন । উদ্দেশ্যহীন মানুষেরজীবন হালবিহীন । নৌকার মতো অবস্থা হয় । একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যই একটি মানুষকে সফলতার স্বর্ণশিখরে নিয়ে যেতে পারে ।
জীবনে লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা :
জীবনে সার্থকতা অর্জন করতে হলে একটি দৃঢ় সংকল্প চাই । কবি বলেছেন— ” মন রে কৃষিকাজ জানো না এমন মানব – জমিনরইল পতিত , তো সোনা । ” মানব – জমিনে সোনা ফলাতে হবে । এ জন্য যথাসময়ে বীজ বপন এবং আনুষঙ্গিক পরিশ্রম ওসাধনার দরকার । তেমিন জীবনের স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়োজন সাধনা ও চেষ্টা । জীবনের লক্ষ্যে উপনীত হওয়ারপথে অনেক বাধা ও বিঘ্ন রয়েছে । কিন্তু তাতে পশ্চাৎপদ না হয়ে সম্মুখের স্থির লক্ষ্যাভিমুখে অগ্রসর হয়ে চলতে হবে । তাইজীবনের চলার পথে চাই নির্দিষ্ট এবং সুপরিকল্পিত পথরেখা । সেই পথরেখাই সফলতার স্বর্ণশিখরে উপনীত করবে । তাইজীবনের প্রারম্ভেই আমাদের লক্ষ্য স্থির করা উচিত ।
জীবনের লক্ষ্য স্থির করার সময় :
লক্ষ্য ও প্রতিজ্ঞা জীবনে প্রতিষ্ঠা এনে দেয় । লক্ষ্যহীন মানুষ নদীর বুকে মাঝিবিহীন নৌকার মতো দুলতে থাকে । তাই জীবনকেসুন্দর করতে হলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও প্রতিজ্ঞা থাকা দরকার । আর ছাত্রজীবনই একজন ব্যক্তির ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিজ্ঞা ওপ্রস্তুতির সময় । ছাত্রাবস্থায়ই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী অগ্রসর হতে হয় । তাহলেই জীবেন প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় ।প্রত্যেক ছাত্রেরই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন থাকা উচিত । আর এ স্বপ্নই তার জীবনের লক্ষ্য । কাজেই তার জীবনের লক্ষ্যরূপ স্বপ্নকেবাস্তবায়িত করার জন্য পরিকল্পনা মোতাবেক এগিয়ে যেতে হবে ।
আমার জীবনের লক্ষ্য :
আমাকে জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে অন্ধের মতো হাতড়ে মরতে হয়নি । বাল্যকাল থেকেই শিক্ষকতা পেশার প্রতি আমার শ্রদ্ধাছিল অপরিসীম । তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আমি একজন আদর্শ ও ন্যায়নিষ্ঠ শিক্ষক হবো । হয়তো শিক্ষকতার পেশাকেঅনেকেই হেয় চোখে দেখেন , তবুও শিক্ষকতাই আমার কাছে মহান ও সম্মানজনক পেশা । যদিও শিক্ষকদের বেতন খুব সামান্য , তবুও আমি সত্য ন্যায়ের আদর্শকে সমুন্নত রেখে মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করে সত্যিকার অর্থে একজন ভালো শিক্ষকহতে চাই আবাদ করলে ।
এরকম লক্ষ্য স্থির করার কারণ :
আমার সহপাঠীদের মধ্যে অনেকেই ভবিষ্যতে হয়তো ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার , উকিল বা বড় ব্যবসায়ী হবে । কিন্তু যে পথই তারাবেছে নেক না কেন , সমাজসেবার আদর্শ নিয়ে চললে প্রত্যেকের জীবনে সফলতা আসবে । আমিও আমার জীবনের সার্থকতারজন্য , দেশের জনগণকে শিক্ষার আলো দেয়ার জন্য , তাদেরকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিতকরার জন্য একজন আদর্শবান শিক্ষক হতে চাই । কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে যথেষ্ট জ্ঞান দান করা যায় , কিন্তু তাকেগড়ে তোলা যায় না । অপরদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থাকে অপরিণত বিচার – বুদ্ধি । ফলে সহজেই যে কেউতাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে বশে আনতে পারে । তাই আমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে আগ্রহী ।
দেশের অবস্থার সঙ্গে আমার লক্ষ্যের যোগসূত্র :
আমাদের দেশে শিক্ষার হার এখনো অনেক কম । ফলে সমাজে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে । আর অশিক্ষা ওকুসংস্কার যেখানে প্রবল , সেখানে মানুষের কোনো উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয়।কারণ তারা নিজেরাই নিজেদের ভালো – মন্দ জানেনা । ফলে গ্রামের মহাজনশ্রেণি এবং কিছু সংখ্যক অর্থলগ্নিকারী এনজিও তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের ওপর অত্যাচারকরছে । তাই আমি আদর্শবান শিক্ষক হয়ে তাদেরকে শিক্ষিত করে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলব ।
লক্ষ্যের সার্থকতা:
আমি একজন আদর্শবান ও ন্যায়নিষ্ঠ শিক্ষক হয়ে আমাদের গ্রামের এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের কোমলমতি ছেলেমেয়েদেরকে সুশিক্ষাদিতে আপ্রাণ চেষ্টা করব । আজকের শিক্ষার্থীরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার । আমি তাদেরকে সৎ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে এবংঅত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়তে হয় , তা শিক্ষা দেবো । আর তখনই হবে আমার শিক্ষকতার সার্থকতা । এসবকাজের পাশাপাশি আমি শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জন্য কাজ করে যাব । তবে আমি জানি আমার একার পক্ষেএতবড় একটা জাতীয় সমস্যা দূর করা সম্ভব নয় । তাই আমি যে বিদ্যালয়ে থাকব সেখানে দুর্নীতির শিকড়ই গজাতে দেবো।এছাড়া আমার পার্শ্ববর্তী স্কুলগুলোর সহকর্মীদেরকেও এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হওয়ার অনুরোধ করে যাব । এতে কিছুটা হলেওশিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি দূর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি ।
প্রস্তুতি :
‘ আমি শিক্ষক হিসেবে নিজেকে তৈরি করার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি । আমি ইংরেজি , বিজ্ঞান , গণিত , বাংলা ভূগোল , সমাজবিজ্ঞান , ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জনের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি । আমি আমার দেশের গ্রামের মানুষের অবস্থা। উপলব্ধি করার জন্য নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের বই পুস্তক , ম্যাগাজিন ও পত্রিকা পড়ে থাকি । শিক্ষার্থীদের সহজে বোঝানোরকার্যকর পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা লাভের চেষ্টা করছি । মোটকথা , আমি এখন থেকে একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলিঅনুশীলন করতে শুরু করেছি ।
উপসংহার :
মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী । আর এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে যে ব্যক্তি মানুষের কল্যাণে পৃথিবীতে কিছু করে যেতে পারেন , তার জন্মইসার্থক । আমিও একজন আদর্শবান শিক্ষক হয়ে মানবজাতির কল্যাণের জন্য কিছু করে যেতে চাই । জাতি গঠনে অবদান রেখেধন্য হতে চাই । আমি এও জানি , শিক্ষক হওয়া আর ভালো ও আদর্শবান শিক্ষক হওয়া এক কথা নয় । তাই আমিআন্তরিকভাবেই আমার লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যাবো । আমার আদর্শ যেন আমার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সমাজেরচারদিকে ছড়িয়ে পড়ে , আমি যেন হতে পারি সত্যিকারের মানুষ গড়ার কারিগর– মহান আল্লাহর কাছে এটাই প্রার্থনা ।