ইরানী চলচ্চিত্র pdf ও বইয়ের রিভিউ
বইয়ের নাম |
ইরানী চলচ্চিত্র |
লেখক |
অপূর্ব কুমার কুন্ডু |
Publisher |
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ |
Number of Pages |
95 |
দেশ |
বাংলাদেশ |
মুখবন্ধ
দু‘দুবার নির্বাচিত আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আত্মজীবনী মাইলাইফ ’ পৃথিবীর একটা বড় অংশের পাঠকদ্বারা বহুল পঠিত এবং প্রশংসিত । সেখান থেকে জানা যায় বিল ক্লিনটন কোনো এক নির্বাচনে চরমভাবে পরাজিত হয়েছিলেন ।পরাজয়ের কারণ খুঁজতে যেয়ে তিনি যে কারণটি খুঁজে পান সেটি হলো যে লোকটি তার হয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রতিনিধিত্বকরেছেন সেই লোকটি সেই এলাকার লোকদের কাছে বিরক্তিকর , ধূর্ত এবং নিন্দিত হিসেবেই পরিচিত । এমন একটি লোক বিলক্লিনটনের প্রতিনিধিত্ব করবে আর লোকে তার গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেবে তা তো হয় না ।
ফলে ক্লিনটনের নিশ্চিত ভরাডুবি । কিন্তু মানুষতো ভুল থেকেই শিক্ষা নেয় । বিল ক্লিনটন শিক্ষা নিলেন জীবনে হার কিংবাজিত যাই আসুক কখনোই মুখপাত্র নির্বাচনে ভুল করবো না । তেমনি একজন লেখকের মুখপাত্র এক অর্থে প্রকাশক ।পত্রপত্রিকায় লেখার সুবাদে জীবনের প্রথম বইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে যখন বাংলা সাহিত্যের কূলহীন কিনারহীন এই মহাসমুদ্রেরডিঙ্গি ভাসিয়ে খুঁজে পেতে চাইলাম কোলাহলমুখর পাঠক – পাঠিকাদের মিলনের হাট তখন চেয়েছিলাম যেন এমন একটা ডিঙ্গিনৌকা তথা প্রকাশক পাই যিনি পাঠক – পাঠিকাদের ঐ মিলনমেলায় পৌছে দিতে পারেন সগৌরবে এবং সাবলীলভাবে । অবশেষেপেয়ে গেলাম তরুণ , স্মার্ট এবং উদ্যমশীল দুই যুবক জহিরুল আবেদীন জুয়েল এবং আদিত্য অন্তরদের যৌথ প্রকাশনা ইত্যাদিগ্রন্থ প্রকাশ । ভিনদেশী চলচ্চিত্র বইটি এলো ২০০৮ – এর একুশে বইমেলায় ।
এবার যখন না না করেও বেশ কয়েকটি ইরানী চলচ্চিত্রের রিভিউ লেখা শেষ হলো তখন প্রকাশকদ্বয় মনে করলেন ইরানীচলচ্চিত্র নামেই পাঠক – পাঠিকাদের হাতে একটা বই তুলে দিলে কেমন হয় । কেমন যে হয় সেটা ভাবতে বসে আমি নিজেইবিস্মিত এবং রোমাঞ্ছিত । বাংলাদেশের একটা বড় অংশের দর্শক বাংলাদেশ টেলিভিশনের কল্যাণে ইরানের চলচ্চিত্রের সাথেপরিচিত । বিগত সময় উইকলি সিনেমা প্রোগ্রামে বাংলায় ডাবিংকৃত ইরানী চলচ্চিত্র দেখতে বসা কোনো দর্শককে টেনেও তোলাসম্ভব হয়নি । ডাবিং বাংলায় হলেও ইরানী চলচ্চিত্রের যে সার্বজনীন ভাষা সেটা বুঝতে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেআসা লাগে না সেটা দর্শকমাত্রই স্বীকার করেন । কিন্তু পরবর্তীতে ইরানের চলচ্চিত্র যেভাবে ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধি নিয়ে এগিয়েছেসেভাবে বাংলাদেশী দর্শকদের দেখার সুযোগ ঘটেনি ।
যদিওবা দু‘চারটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ইরানী সমসাময়িক চলচ্চিত্র এসেছে কিন্তু তা সকলের পক্ষে দেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি । ফলেআস্ত একটা ইরানী চলচ্চিত্রের বই হলে সেটা যে কিছু না কিছু চাহিদা পূরণ করবে সেটা নিশ্চিত । পরিচালক মাজিদ মাজিদিএবং আব্বাস কিয়ারোতামি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অনুরাগীদের কাছে সমান জনপ্রিয় । তাদেরচলচ্চিত্র নিয়ে লেখা হলো। স্বল্পপরিসরে ইরানের সামগ্রিক চলচ্চিত্রের বেড়ে ওঠার পথপরিক্রমা ঠিক কি করম সেটা খুঁজে দেখারচেষ্টা করা হলো।
অপরদিকে ইরানী চলচ্চিত্র নিয়ে মাটির ময়নাখ্যাত তাদের মাসুদ এবং বাংলাদেশে ইরানের সাবেক কাউন্সিলর ড . এমআরহাশেমির একটা মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকদের সামনে তুলে ধরা গেল । আশা করা যায় পাঠক – পাঠিকারা যথেষ্ট কৌতূহলমেটানোর মতো উপাদান বইতে পাবেন । নটরডেম কলেজে পড়ার সময় অনেক গুণী এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষক – শিক্ষিকাদের সান্নিধ্যপেয়েছি । কিন্তু অনেক পরে ইংরেজি ভাষার মানে উদ্ধারে এগিয়ে আসবে এক জুনিয়র নটরডেমিয়ান সেটা ভাবিনি ।
অথচ কঠিন ইংরেজি বাক্যের সাবলীল বাংলা বাক্য করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সেই নটরডেমিয়ান সৌরভ ঘণ্ট ।অপরদিকে ফার্সি বাক্যের বাংলা করে এবং প্রত্যক্ষ – পরোক্ষভাবে লেখায় উদ্বুদ্ধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’এর স্টুডেন্টমোহাম্মদ আরজু । তাদের আন্তরিক সহযোগিতার কথা মনে হলেই আনন্দ হয় । এইসব আনন্দ – উচ্ছ্বাসের বাইরেও আরোঅনেক ভালো ভালো ইরানী চলচ্চিত্র রয়ে গেল যেগুলো দেখার সুযোগ হলেই লিখে জানানোর ব্যাকুলতা রইলো।
ইরানী চলচ্চিত্রের বেড়ে ওঠা একটা বড় সময় ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ইরানী চলচ্চিত্র বাংলায় ডাবিং করে দেখানোর কারণেবাংলাদেশের দর্শকের কাছে ইরানী চলচ্চিত্র বেশ পরিচিত এবং চমৎকার বিষয়বস্তুর কারণে বাংলাদেশী দর্শক দ্বারা প্রশংসিত ।উপরন্তু বছরের বিভিন্ন সময় ঘরোয়াভাবে আয়োজিত বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কারণে ইরানী পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তমিএবং মাজিদ মাজিদির নির্মিত চলচ্চিত্র বাংলাদেশে বহুল প্রদর্শিত । এক জোড়া জুতাকে কেন্দ্র করে তেহরানের এক দরিদ্রপরিবারের দুটি ভাইবোনের মধ্যেকার মর্মস্পর্শী কাহিনী নিয়ে নির্মিত মাজিদ মাজিদির চলচ্চিত্র ‘ চিলড্রেন অব হ্যাভেন ‘ যেমনদর্শক দেখে বেদনায় ভেসেছে তেমনি জীবনের যন্ত্রণার ভার বইতে না পেরে তেহরানে মি . বদি নামে একটি লোক যে আত্মহত্যাকরতে চলছে , সেই মি , বদি নামের লোকটির আত্মহত্যার পথপরিক্রমার কাহিনী নিয়ে আব্বাস কিয়ারোস্তামির চলচ্চিত্র ‘ টেস্টঅব চেরি দর্শক কৌতূহল ও উৎকণ্ঠা নিয়ে দেখেছে ।
আব্বাস কিয়ারাস্তমির চলচ্চিত্র ‘ ক্লোজ আপ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে যেমন ইরানী পরিবেশে বসে চলচ্চিত্র নির্মাণ করাটা কতটাঝুঁকিপূর্ণ এবং সম্ভাবনাময় সেই বিষয়টা যেমন দর্শক দেখেছে তেমনি একজন আফগান হয়ে পরদেশ ইরানে অবৈধভাবে লুকিয়েবাঁচতে চেয়ে সে সীমাহীন লাঞ্ছনা – বঞ্চনা – তিরস্কার অর্থাৎ প্রবাসজীবনের ব্যথা – বেদনা নিয়ে মাজিদ মাজিদির বারান ’ চলচ্চিত্রটিও দর্শক দেখে ব্যথায় ব্যথিত হয়েছে । এসবের বাইরে একজন পিতা ও তার পুত্রের সম্পর্কটা আসলে কি হওয়া উচিত , জীবনের পড়ন্ত বেলায় একজন দাদা – দাদির জীবনে অবলম্বন হিসেবে নাতি – নাতনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ কিংবা মানুষ হিসেবেএকটা অন্ধ শিশুর প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা , অবহেলা অনাদর প্রভৃতির পাশাপাশি অন্ধ হলেও একজন অন্ধ যেঅনেকের থেকে অনেক বেশি দেখে সেই বিষয় নিয়ে মাজিদ মাজিদির চলচ্চিত্র কালার অব প্যারাডাইস ’ দেখে বিভিন্ন দেশেরদর্শকের পাশাপাশি বাংলাদেশের দর্শক বিস্মিত এবং তাজ্জব বনে গেছে ।
একটা আম খেয়ে ভালো লাগলে , তাজ্জব বনে গেলে মানুষ স্বভাবতই জানতে চাইবে সুস্বাদু আমটা রাজশাহীর কিনা । এটাইসহজ এবং স্বাভাবিক ব্যাপার । লিচু খেয়ে ভালো লাগলে দিনাজপুরের কথা আসবে , যেমন দই ভালো লাগলে বগুড়ার প্রসঙ্গ ।কথা হচ্ছে মানুষের এই রঙের হাটে কার যে কাকে কখন ভালো লাগে এটা বলা একটু কঠিন । কিন্তু ভালো যদি লেগেই গেল তবেসেই ভালোর আদ্যপ্রান্ত জানাটা , তার বেড়ে ওঠা , তার স্ট্রাগল , তার সফলতা মানুষ জানবেই জানবে । যা কিছু ভালো তার প্রতিমানুষের | প্রবল আগ্রহ । হাতের সামনে সব থেকে বড় প্রমাণ জ্বলজ্বল করে জ্বলে ওঠা স্বর্ণগর্ভা , কষ্টসহিষ্ণু মা এবং লেখিকাশ্রদ্ধেয়া আয়েশা ফয়েজ ।
হুমায়ূন আহমেদ , জাফর ইকবাল এবং আহসান হাবীবদের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ ত্রিধারার তিন লেখকের মা যিনি , সেই আয়েশাফয়েজ কিভাবে হঠাৎ স্বামীকে হারিয়ে কূলহীন কিনারহীন মহাসমুদ্রের মাঝে পড়ে , ভেসে না যেয়ে কূলে পৌছে তিন ছেলেকেআজকের এই পর্যায়ে নিয়ে এলেন এটা জানার আগ্রহ পাঠকের কল্পনাতীত । ফলে গেলবারের বইমেলায় তাঁর লেখা আত্মজীবনী‘ জীবন যে রকম ’ প্রকাশিত হতে না না হতেই পুনর্মুদ্রণ হয়ে গেল বেশকবার । অর্থাৎ ভালো কাজের ইতিহাস জানার আকাঙ্ক্ষামানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা । ইরানী চলচ্চিত্র ভালো লাগে যে দর্শকদের সেই দর্শক পাঠক হয়ে খুব স্বাভাবিক কারণে ইরানীচলচ্চিত্রের শুরুটা জানবে , বেড়ে ওঠাটা জানবে , সর্বশেষ বিশ্ব চলচ্চিত্রের মানচিত্রের ঠিক কোন জায়গায় ইরান দাঁড়িয়ে সেটাজানবে এটা তো স্বাভাবিক ।
ইরানী চলচ্চিত্রের বেড়ে ওঠা শিরোনামে ইরানী চলচ্চিত্রের ইতিহাসটা লেখা যায় কিনা এটাই মনের মধ্যে ভাবনা । ভাবনাথাকলেই পরিস্ফুটন সম্ভব হয়ে ওঠে না সব সময় । সিনেমা হলে বসে ইরানের রাস্তাঘাট মানুষ প্রকৃতি সব কিছুর সাথে একাত্মহলেও ইরানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি । যাকে কাছ থেকে দেখা হলো না তাকে নিয়ে লিখি কেমন করে ? দ্বিতীয়ত ফার্সি সাহিত্য নিয়েমোটামুটি একটা ভাসাভাসা ধারণা থাকলেও গভীরে যাওয়া হয়ে ওঠেনি সেভাবে । ফলে ইরানের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের মতোবিশাল এবং গভীর বিষয় নিয়ে আদৌ লেখা সম্ভব কিনা মনের মধ্যে এমনটা যখন সংশয় তখন আঁধার রাতে আলো জ্বেলেসমাধানের পথ দেখিয়ে দিলেন ইরানী কালচারাল সেন্টারের পাবলিক রিলেশন অফিসার , মিষ্টভাষী এবং আন্তর্জাতিক বিষয়কঅনুবাদক ও লেখক জনাব মাঈন উদ্দিন ।
তার একটাই কথা , প্রযুক্তির সাহায্য নিন । ইরানে যাইনি কিংবা ফার্সি সাহিত্যের গভীর ডুব দেইনি বলেই যে সামনে এগিয়ে চলাযাবে না , জায়গায় দাঁড়িয়ে থেমে থাকতে হবে এটা কেমন কথা ! সোজা ইন্টারনেটের মাউস ক্লিক করুন , ইরান ফিল্ম নাম বসান, তারপর দেখুন কি পান আর কি না পান ! বাগানের মালি যেভাবে মাটি খুঁড়ে বীজ বুনে , আগাছা তুলে , পানি ঢেলে , বেড়া দিয়েবাগানে গাছে গাছে ফুল ফোটায় এবং অগণিত দর্শকদের দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেয় ঠিক তেমনি ইরানী চলচ্চিত্র সমালোচকরা, ইরানী চলচ্চিত্র গবেষকরা সেই অতীত থেকে শুরু করে বর্তমানের সর্বশেষ আপগ্রেড চলচ্চিত্রের রূপরেখা লিখে ইন্টারনেটেছেড়ে দিয়েছে যেন পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের কৌতূহলী পাঠক তার প্রয়োজনের সময় জানতে চেয়ে বঞ্চিত না হয় । বঞ্চিত হইনিআমরাও । ইন্টারনেটের অসংখ্য লেখা পড়ে মোটামুটি বাছাই শেষে যা পেলাম তাই পাঠক – পাঠিকার সাথে শেয়ার করলাম ।১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্যারিসের ইন্ডিয়ান ক্যাফেতে দুই দাদা ভাই লুমিয়ের ব্রাদার্স যে প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে মহাকালেরমহাকাশে খচিত করলো চলচ্চিত্রের মতো এক মহান মাধ্যম সেই ফ্রান্সের।