একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায় by রউফুল আলম

বইয়ের নাম |
একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায় |
লেখক |
রউফুল আলম |
প্রকাশক |
সমগ্র প্রকাশন |
পেজ |
192 |
দেশ |
বাংলাদেশ |
ভাষা |
বাংলা |
যারা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন এবং কিশোর – তরুণদের জীবনকে পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে চান — এ বইটি তাঁদের জন্যখুবই সহায়ক ও উদ্দীপক হবে বলে আমার বিশ্বাস । নিচে বইয়ের একটা টপিক তুলে ধরা হলো।
একটি সাবমেরিন বনাম পাঁচ হাজার জানালা
চাইনিজ ভাষায় আমেরিকার নাম হলো‘ মেইগুয়ো । শব্দটির অর্থ বিউটিফুল কান্ট্রি — সুন্দর দেশ । আমেরিকার কী দেখে ওরাসুন্দর দেশ ’ নামে ডাকতে শুরু করেছিল , সে তথ্য অবশ্য জানা নেই । তবে একজন চাইনিজ সত্যিকার অর্থে আমেরিকাকে কীদৃষ্টিতে দেখে , সেটা জানতে হলে তার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব থাকতে হবে আপনার । আমেরিকার সঙ্গে চীনের একটা রাজনৈতিকসমস্যা হলো তাইওয়ান নিয়ে । তাইওয়ান বস্তুত দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকার প্রত্যক্ষ সমর্থনে । চীন অবশ্য সম্মুখ শত্রুতায় যায় নাসহজে ।
ওরা খুবই কৌশলী জাতি । আর পরিশ্রমী জাতি হিসেবে ওদের খ্যাতি সারা দুনিয়ায় । ওদের লক্ষ্য একটাই — দাঁড়িয়ে থাকতেহবে । চীন সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ , যেটি আমেরিকার তৈরি গুগল , ফেসবুক ইত্যাদি কিছুই ব্যবহার করে না ( জাতীয়ভাবে) । তাদের নিজেদের মতো করে তারা এগুলা তৈরি করেছে । অন্যের কাছ থেকে জ্ঞান ধার করা ছাড়া ওরা অন্যকিছু সহজে ধারকরে না । আফিম – যুদ্ধ ( Opium War ) নামে চাইনিজরা একটা যুদ্ধ করেছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে । সে যুদ্ধটার সূত্রপাত হয়েছিলকেন জানেন ? ব্রিটিশ সরকার পণ্য রপ্তানি করতে চেয়েছিল চীনে ।
চীনের রাজা কোনো পণ্যই আমদানি করতে চাননি । প্রত্যাখ্যান করেছিল সব । এদিকে চীন থেকে চা আমদানি করে ব্রিটিশদেরবাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছিল । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ব্রিটিশরা চীনের দক্ষিণাঞ্চলে আফিম বিক্রি শুরু করে ।একসময় চাইনিজরা আফিম – আসক্ত হয়ে গেলে , চীনের সরকার ব্রিটিশদের এই অনৈতিক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। চীন সে যুদ্ধে হেরে যায় । পরিণামে হংকং দ্বীপ ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায় শত বছরের জন্য । বিদেশি পণ্য আমদানির বিরুদ্ধেকোনো দেশের এমন শক্তিশালী মনোভাব পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই । কিন্তু এই দেশটি সরা দুনিয়ায় তাঁদের মানুষ পাঠায় ।
পুরো দুনিয়া থেকে তারা শেখে । আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি তরুণ গবেষক পাঠায় যে দেশটি , সেটা হলো চীন । শুধু সরকারিপৃষ্ঠপোষকতায় প্রায় ১০ হাজার চীনা ছেলেমেয়ে প্রতিবছর আমেরিকায় আসে । তারা সব প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে । গবেষণারঅভিজ্ঞতা নেয় । এটাকে আমি বলি ইন্টিলেকচুয়াল স্ক্যানিং ‘ । হাজার হাজার ছেলেমেয়ে পাঠিয়ে এখানে গবেষণার যত ডিজাইন, অ্যারেঞ্জমেন্ট , টুলস – টেকনিক আছে , সেগুলো স্ক্যান করে নিয়ে যাওয়া । চীন তার দেশের ছেলেমেয়েদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যসহস্র মেধাবী প্রকল্প ( Thousand Talent Plan ) চালু করেছে । ইউরোপ – আমেরিকা থেকে মেধাবী তরুণদের ফিরিয়ে নিয়ে কয়েকহাজার কোটি টাকা তাঁদের দেওয়া হয় । তরুণেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে গবেষণা করতে থাকেন । এমন একটি প্রকল্প মাত্র কুড়ি বছরচালু থাকলে , কুড়ি হাজার গবেষক তৈরি হয়ে যায় ।
কী দূরদর্শী ও টেকসই পরিকল্পনা তাদের ! চীন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে । যে দেশটি সারা দুনিয়া থেকে শেখে , তাদের কাছ থেকে আমরা প্রচুর জ্ঞান বিজ্ঞান নিতে পারি । কিন্তু জাতীয়ভাবে সেটা কি আমরা করছি ? এই চীন থেকে দেড় হাজারকোটি টাকা দিয়ে সরকার জাহাজ কিনেছে । দুই যুগের পুরোনো জাহাজ । অথচ সরকার চীনকে বলতে পারত , আমরা আগামীপাঁচ বছর পাঁচ হাজার তরুণকে তোমার দেশে পাঠাব । তারা কেউ কাজ করবেন মেডিসিন নিয়ে । কেউ এরো – ইঞ্জিনিয়ারিং , কেউপারমাণবিক গবেষণা কিংবা কেউ অ্যাস্ট্রোফিজিকস ( Astrophysics ) নিয়ে গবেষণা করবেন । বিনিময়ে দেড় হাজার কোটিটাকাই আমরা দেব । চীন যে টাকা পাওয়ার , সেটাই পেত ।
আর আমরা পেতাম কতগুলো জানালা । সে জানালা দিয়ে নতুন নতুন দিক দেখতে পেতাম আমরা । দেড় হাজার কোটি টাকাবিনিয়োগ করে শত হাজার কোটি টাকার সম্ভাবনা তৈরি করা যেত । একটা জাহাজ কখনো পাঁচ হাজার জানালা খুলে দিতে পারেনা । কোনো দিন না । রাষ্ট্র যদি একটু বুঝতে চাইত।