বাংলা রচনা সমগ্র

কম্পিউটার এ যুগের বিস্ময়কর আবিষ্কার রচনা

ভূমিকা :

কম্পিউটার মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির উৎকর্ষের এক উজ্জ্বল নিদর্শন ও আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠতম অবদান । সেদিন পর্যন্তও শব্দটি ছিল সর্বসাধারণের অপরিচিত । ১৯৫০ সালের ইংরেজি অভিধানেও শব্দটি ছিল অনুপস্থিত । ১৯৬৪ সালের কনসাইজ অক্সফোর্ড ডিকশনারীর পঞ্চম সংস্করণে শব্দটির অর্থ দেয়া হল “ ইলেকট্রনিক যন্ত্রগণক । ” শব্দটি আসলে এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ কম্পিউটেয়ার থেকে । এর অর্থ গণনা করা । কিন্তু কম্পিউটার এখন আর শুধু গণনাই করে না , তার কাজ এখন বহু ও ব্যাপক ।

চার্লস ব্যাবেজ ও কম্পিউটার তত্ত্ব:

ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজই হলেন আধুনিক কম্পিউটারের জনক । কেননা , তিনিই প্রথম । পাঁচটি অংশে সম্পূর্ণ আধুনিক কম্পিউটারের গঠনতন্ত্রের আবিষ্কার করেন । এ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই তিনি উনিশ শতকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে ‘ ডিফারেন্স ইঞ্জিন ’ ও ‘ অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন ’ নামে দুটি কম্পিউটার তৈরির চেষ্টা করেছিলেন । ব্যাবেজের কম্পিউটার তৈরি হয়েছিল ধাতৰ যন্ত্রাংশ দিয়ে । তখনও সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ তৈরি হয়নি । তাই ব্যাবেজ তার তত্ত্বকে পূর্ণাঙ্গ বাস্তব রূপ দিতে পারেননি । কিন্তু তার গঠনরীতি আজকের ইলেকট্রনিক কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয় । ব্যাবেজের কম্পিউটারের গঠনতত্ত্বের পাঁচটি অংশ হল :
এক ‘ স্টোর ’ , ‘ কন্ট্রোল ’ ও মিলকে সম্মিলিতভাবে বলে সেন্ট্রাল ইউনিট ‘ অর্থাৎ কম্পিউটারের মগজ । ইনপুট ’ অংশ তথ্য ও নির্দেশ গ্রহণ করে । “ আউটপুট প্রকাশ করে গণনার ফলাফল । কম্পিউটারে তথ্য ও নির্দেশ প্রকাশ করানোর জন্য প্রয়োজন হয় , বিশেষ ভাষায় তাকে বলে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ । কম্পিউটারের ভাষা অনেক রকম । যেমন , ‘ কোল ’ , ‘ পাঙ্কাল ’ ‘ আড়া ’ প্রভৃতি । বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বেছে নেয়া হয় বিশেষ বিশেষ ভাষা । আর প্রত্যেকটি ভাষারই আছে নিজস্ব সুবিধা – অসুবিধা।

কম্পিউটারের কাজ:

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার উত্তরোত্তর খুলে দিয়েছে নতুন নতুন দিগন্ত । কম্পিউটার এখন আর শুধু অঙ্কই কষে না । তার কাজ বর্তমানে আরও বহু ধরনের বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ । কম্পিউটার এখন রুগীর রোগ বলে দিতে পারে , বলে দেয় ব্যবসার লাভজনক পদ্ধতি । কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে যানবাহন চলাচল । প্লেনের বা ট্রেনের আসন সংরক্ষণ করে । ইলেকট্রিকের বিল হিসেব করতে পারে । পারে লকে আয়কর বা বীমার হিসেব কষে দিতে । কম্পিউটার দাবা খেলতে পারে । দাবা ছাড়া আরও বহু রকমের খেলা খেলতে পারে সে । তার মধ্যে রয়েছে বহু রকমের ভিডিও গেম ‘ । কম্পিউটার এখন উকিলের কাছে পুরনো মামজার তথ্য হাজির করে । কোনো মানুষের কণ্ঠস্বর শুনে তাকে শনাক্ত করে । স্মৃতিতে সঞ্চিত সঙ্কেত থেকে যুক্তি প্রয়োগ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় । ‘ ভাস্কর কম্পিউটার নির্দেশ পেলে যে কোনো জটিল ভাস্কর্য খোদাই করে । বর্তমানে বিজ্ঞাপন ও বাণিজ্য সংস্থাগুলোর যাবতীয় বিজ্ঞাপন প্রচারের দায়িত্ব নেয় কম্পিউটার । এছাড়া ছোটদের জন্য রয়েছে শিক্ষামূলক কম্পিউটার কিট ‘ । বর্ণ পরিচয় থেকে শুরু করে ভূগোল , বিজ্ঞান , ইতিহাস , অক সবই শেখাতে পারে এ শিক্ষামূলক কিটগুলো।

কম্পিউটারের ক্রমোন্নতি:

গঠনপ্রণালীর এক একটি বিশিষ্ট ধারাকে বলা যেতে পারে এক একটি জেনারেশন । ১৯৪৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আবিস্কৃত হয় প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইলেকট্রনিক কম্পিউটার ‘ ইনিয়াক । এর সাহায্যে সেকেণ্ডে তিনশটি গুণের ফল বের করা গিয়েছে । কম্পিউটারের গঠনপ্রণালীও ক্রমোন্নতির পথে । এভাবেই চল্লিশের দশকের প্রথম জেনারেশন কম্পিউটার প্রায় দশ বছর রাজত্ব করেছে । এরপর এসেছে নতুন নতুন জেনারেশনের কম্পিউটার মডেল । বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে চতুর্থ জেনারেশনের কম্পিউটার । এখানেই শেষ নয় । আগামী দশকে নিয়ে আসছে ‘ পঞ্চম জেনারেশনের কম্পিউটার । মোটকথা সারা পৃথিবীর কম্পিউটার কোম্পানীগুলোর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নিত্য নতুন চমক সৃষ্টির প্রতিযোগিতা ।

কম্পিউটার ও বেকার সমস্যা :

কম্পিউটারের দানবীয় ক্ষিধে । তার মুখে গুঁজে দেয়া হচ্ছে অসংখ্য কাজ । তবু তার রাক্ষুসে ক্ষিধে মেটে না । সে মানুষের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় আরও কাজ । বেকারত্বের একদিন পূর্ণ নিয়োগের অনুকূল পরিবেশ ছিল , সেসব দেশেও অটোমেশন বসানোর জন্য আজ বেকারত্বের দীর্ঘশ্বাস । আমাদের দেশে বেকার সমস্যা আরও তীব্র । দিন দিনই তা বেড়ে চলছে । কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে চাকরির সখ্যো হ্রাস পাবে । ব্যাংকের অনেক শাখা সম্প্রসারণ বন্ধ করে দিতে হবে হয়ত । শিল্প কারখানাতে যেখানে অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হত সেখানে কম্পিউটারের বদৌলতে তা হ্রাস করতে হবে।

উপসংহার:

কম্পিউটারকে আজ ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয় । অনিবার্যভাবে তার আগমন ঘটে গেছে গোটা দুনিয়ায় । সেক্ষেত্রে দেশের বাস্তব অবস্থাকে স্বীকার করেই এর প্রয়োগ ক্ষেত্র নির্বাচন করতে হবে । এর প্রয়োগের মধ্য দিয়েই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের উপায় । শতাব্দীর এ বিস্ময়কর আবিষ্কারটিই আজ বলে দেবে কোন পথে আমাদের চলার সিড়ি কোন পথে আমাদের অনগ্রসরতা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button