চিকুনগুনিয়া অথবা যন্ত্রণাদায়ক রোগ (রচনা)
ভূমিকা :
সম্প্রতি বাংলাদেশে এক প্রকার রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যা জনমনে রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করেনগরজীবনে এর ব্যাপক বিস্তার লক্ষ করা গেছে। রাজধানী ঢাকায় প্রায় প্রতিটি পরিবারই এ রোগের যন্ত্রণা ভোগ করেছে।একজনের মাধ্যমে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে পরিবারের প্রায় প্রত্যেক সদস্যের মাঝে এ রোগ সংক্রমিত হয়েছে। এ রোগের সবচেয়েভয়াবহতা লক্ষ করা যায় দীর্ঘ রোগ–যন্ত্রণার মাধ্যমে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ প্রায় অকেজো করে ফেলে এ রোগের যন্ত্রণা।
পরিচয় :
চিকুনগুনিয়া একটি আফ্রিকান শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বাঁকা হয়ে যাওয়া, কুঁকড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এ রোগের সংক্রমণে
সাধারণত শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় বা গিটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং বিশেষ করে হাত–পায়ের আঙুলগুলো বাঁকা হয়ে আসে। কোনোকিছু ঠিকমতো ধরা যায় না। শরীরের অঙ্গ–প্রত্যঙ্গগুলো আপনাআপনি কুঁকড়ে আসে। সোজা হয়ে দাঁড়াতেও কষ্ট হয়।
সংক্রমণ :
চিকুনগুনিয়া রোগ বাংলাদেশে খুব বেশি পুরনো নয়। সম্প্রতি এর প্রকোপ দেখা দেওয়ায় সর্বসাধারণ মানুষের নজরে এসেছে।এটি আমাদের কাছে খুব একটা পরিচিত ছিল না। দেখা গেছে, এডিস মশার কামড়ে এ রোগের ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশকরে। এরপর ধীরে ধীরে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে এবং চিকুনগুনিয়া রোগ ছড়ায়।
রোগের লক্ষণ :
সাধারণত জ্বরের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার হতে থাকে। এছাড়াও এ রোগের বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। যেমন– জ্বর ক্রমাগত ১০০ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি থাকা, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করা, শরীরের প্রতিটি জোড়ায় বা গিটে প্রচণ্ড ব্যথা করা ও
কুঁকড়ে বাঁকা হয়ে যাওয়া, বিছানা থেকে উঠতে না পারা, স্বাভাবিকভাবে হাটাচলা করতে না পারা, হাত দিয়ে কোনো জিনিস ধরতেনা পারা, কোনোরকম কাজ করতে না পারা, দীর্ঘদিন পর্যন্ত শরীরের ব্যথা–বেদনা থাকা ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা :
চিকুনগুনিয়া রোগটি আমাদের দেশে খুব বেশি পরিচিত নয় বলে এর নির্ণয় পদ্ধতি ও চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা অত্যন্ত অস্পষ্ট।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া অন্যান্য হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগলাতে এ রোগে পরীক্ষার পর্যাপ্তযন্ত্রপাতি নেই বলে জানা গেছে। তবে ধীরে ধীরে অন্যান্য হাসপাতালগুলোও এ রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ডাক্তাররা এরোগের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর পাশাপাশি জ্বর কমে এলেশরীরের ব্যথা–যন্ত্রণা উপশম করতে ফিজিওথেরাপি দেওয়ার পরামর্শও দিয়ে থাকেন।
প্রতিরোধ :
চিকুনগুনিয়া রোগ নতুন হওয়ায় এর প্রতিরোধ ব্যবস্থাও খুব একটা গড়ে ওঠেনি। তবে সচেতনতার সাথে এ রোগেরভাইরাস বহনকারী এডিস মশার প্রজনন ও বিস্তার রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিটিকর্পোরেশন,ডাক্তার ও সমাজের সচেতন–শিক্ষিত মানুষেরা। তাদের পরামর্শ হচ্ছে–
• এডিস মশার বংশবিস্তার ও প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে নষ্ট করে দিতে হবে।
• যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না।
• বাড়ির পাশের ডােবানালা সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
• ফুলের টবে জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে।
• ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।
·চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ও সর্বোপরি সকলকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
অপকারিতা :
চিকুনগুনিয়া রোগে সাধারণত মৃত্যুর ঘটনা খুব বেশি ঘটে না; তবে এর যন্ত্রণা যেন মরণযন্ত্রণাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।ক্ষেত্রবিশেষ কিছু লােকেরব প্রাণহানির ঘটনাও দেখা গেছে। শারীরিক ব্যথা–যন্ত্রণা এক–দুমাস থেকে বছরব্যাপীও হতে পারে ।
ফলে মানুষের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় এ রোগে। বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায়, সেসব লোকের জন্য এ রোগ যেন মরার
ওপর খাড়ার ঘা‘ হিসেবে আবির্ভূত হয়। এ রোগের যন্ত্রণায় অনেককেই বলতে শোনা গেছে, আমার শত্রুরও যেন এ রোগ না হয় ।
উপসংহার :
চিকুনগুনিয়া এক ভয়াবহ যন্ত্রণা উদ্রেককারী রোগ। যথাযথ চিকিৎসা না থাকায় এ রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে এর
ব্যাপারে সকলকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। এ রোগের বিস্তার রোধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে।