ছুটির দিনে বাংলা রচনা
ভূমিকা :
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন “ মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদেরছুটি।” আসলে ‘ ছুটি শব্দটি উচ্চারিত হলেই যেকোনো মানুষের মনই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় । মনে মনে কল্পনার জালছড়িয়ে রাখে ছুটির দিনটি কি করে কাটাবে , কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে ইত্যাদি । এ জগৎ সংসারের কর্মক্ষেত্রে মানুষস্বাভাবিকভাবে নিজ কর্ম করে জীবনের নির্ধারিত দিনগুলো কাটিয়ে দেয় । কিন্তু অবিরাম কর্মব্যস্ততা মানুষের দেহ – মনকেক্লান্তিতে ভারাক্রান্ত করে তোলে । ফলে জীবন নিতান্তই একঘেয়েমি হয়ে পড়ে । সেই কর্মময় জীবনের ক্লান্তি ও একঘেয়েমির কবলনিষ্কৃতি লাভের জন্য মাঝে মাঝে ছুটির প্রয়োজন । এ দুটি মানুষের দেহ – মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল করে তোলে । মানুষকে নতুনকরে কাজ করার শক্তি যোগায় । তাই কর্মব্যস্ত মানুষের জীবনে ছুটি আনন্দের বার্তা বয়ে আনে । ছুটি আসেজীবনের সামনেরমুহূর্তগুলো কে কাজে মুখর করার প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয়ের জন্য।
ছুটির দিনের আনন্দ:
ছুটির দিনটি অত্যন্ত আনন্দঘন দিন । এ দিনটি সবাই হয়ে থাকে আঁচাহীন পাখির মতো, বাধাহীন বল্লা হরিণের ন্যায় । বিভিন্নপেশার বিভিন্ন জন তাদের ছুটির দিনটিকে উপভোগ করে থাকে নানাভাবে।এই দিনে ছাত্র – ছাত্রীদেরেকে স্কুলের কড়া নিয়মনীতিরভেতরে আবদ্ধ থাকতে হয় না।বাড়িতেও অভিভাবকদের কড়া শাসনে থাকতে হয় না।সবাই এই দিনে সহজ স্বাভাবিকজীবনধারার কিছুটা পরিবর্তন আনে । ছুটির দিনে যেহেতু ধরা – বাঁধা কাজের কোনো তাড়া থাকে না , তাই স্বভাবতই এই দিনেঅনেকে সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে । ছুটির দিনে অনেকেই বাইরে ঘুরে বেড়ায় । ঘরে ফিরে আসার নাম থাকে না । কেউকেউ আবার বাসার বাইরে না গিয়ে ঘরে বসেই ছুটি কাটায় । কেউ কেউ আবার গল্পের বই , নাটক , মজার কাহিনী , উপন্যাসইত্যাদি পড়ে বা টিভি , ভিসিআর দেখে বা ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শুনে ছুটির দিনটি কাটিয়ে দেয় । ছুটির দিনে কেউ কেউআত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যায় । লম্বা ছুটি হলে অনেকে দূরে নানার বাড়ি , ফুফুর বাড়ি , খালুর বাড়ি বেড়াতে যায় । ছুটির দিনেঅনেকে বন্ধু – বান্ধব মিলে আবার পিকনিকের আয়োজন করে থাকে । গ্রীষ্মের ছুটিতে আবার অনেকে আম , জাম , কাঁঠালপ্রভৃতি সুস্বাদু ফল খাওয়ায় মেতে ওঠে । কেউবা আবার নজরুল ইসলামের মতো হয়ে ওঠে লিচু চোরের নায়ক । মোটকথা , ছুটিরদিনটিকে সবাই যথেষ্ট আনন্দের সাথে উপভোগ করে থাকে।
ছুটির দিনের বর্ণনা :
ছুটির দিনকে যথাযথভাবে উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা দরকার । তেমনি একটি ছুটির দিনে আমি ছুটি উপভোগকরতে মামার সঙ্গে মিরপুর চিড়িয়াখানায় যাব বলে মনস্থির করলাম । সকালে নাস্তা করে মামার সঙ্গে একটি রিক্সায় চেপে চলেগেলাম গুলিস্তান।সেখান থেকে মিরপুরে অভিমুখী বাসে চড়ে বেলা দশটায় আমরা গিয়ে পৌছলাম মিরপুর চিড়িয়াখানায় । মামাআমাকে প্রথমেই নিয়ে গেলেন বাঘের খাঁচার কাছে । কিন্তু বাঘটি ঠিক আমার কল্পনার বাঘের মতো মনে হয় নি । মামা আমাকেবোঝালেন এটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার নয় , এটা একটি চিতা বাঘ । তারপর তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন একটি প্রকাণ্ড বাঘেরখাঁচার কাছে আমরা যেতেই প্রকাণ্ড বাঘটি দু‘তিন পাক ঘুরেই চোখ পাকিয়ে গর্জন করে উঠলো । আমি ভয় পেয়ে গেলাম । বুঝতেপারলাম এ বাঘ আমার কল্পনার রয়েল বেঙ্গল টাইগার । অনতিদূরেই ছিল কয়েকটি ছোট বড় হাতি । কুলার মতো বড় বড়কানগুলো নেড়ে তারা শুধু এগুচ্ছিল ও পিছুচ্ছিল । তাদের দেখে বড়ই গোবেচারা মনে হলো। হাতি দেখে মোটেই ভয় পেলাম না ।কিন্তু বড় বড় বানর দেখে সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম । তারা বারবারই লোহার বেড়া ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে আমাদের ভয় দেখাচ্ছিল।এভাবে কয়েক ঘণ্টা ধরে আমরা চিড়িয়াখানায় নানা প্রকার সাপ , পাখি , নানা জাতের গরু , উট , হরিণ , হাঁস প্রভৃতি জীবজন্তুদেখে বেড়ালাম।মাঝে মাঝে চকলেট , আইসক্রিম , বাদাম , চিপস ইত্যাদি খাচ্ছিলাম । কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়েপড়ছিলাম । তবুও বিচিত্র সব জীবজন্তু দেখে পুলকে আর বিস্ময়ে আমার মনটি ভরে গিয়েছিল । সারাদিন চিড়িয়াখানা দেখেমামার সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেয়ে ছুটির দিনটি অনেক আনন্দেই কাটিয়েছিলাম।
ছুটির দিনের প্রয়োজনীয়তা:
কর্মই জীবন – এ কথা চিরন্তন সত্য হলেও মানবজীবনে ছুটির দিনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । কারণ কর্মচঞ্চল জীবনেএকটানা কাজ করতে করতে মানুষের মন ক্লান্তি আর অবসাদে বিষিয়ে ওঠে । তাছাড়া অনবরত কাজ করলে কাজের প্রেরণা লুপ্তহয় এবং মানুষের কাছ থেকে ভালো ফল আশা করা যায় না । তাই মানুষের কর্মময় জীবন থেকে ক্লান্তি আর অবসাদ দূর করেসামান্য মুক্তির আনন্দ দিতে ছুটির দিনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য । ছুটির দিনে মানুষ দৈনন্দিন রুটিনের বাইরে মুক্ত বাতাসেদীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ার সুযোগ পায়।অলস বেলায় গা এলিয়ে দিয়ে অর্জন করে শক্তি ও সামর্থ্য।অর্জন করে নতুন করে কাজ করারউদ্যম ও সাহস।তাই কবি বলেছেন “ বিশ্রাম কাজের অঙ্গ যেন এক সূত্রে গাঁথা নয়নের অঙ্গ যেন নয়নেরই পাতা ।
উপসংহার :
প্রকৃতপক্ষে শিশু – কিশোরের মন মানতে চায় না কোনো আইন , কোনো নিয়মনীতি । তারা দুরন্ত – দুর্বার । ছুটির দিনে তাদেরসেই মনেরই বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকে । ছুটির দিনটিকে জীবনে অর্থবহ করে তোলার মতো যথেষ্ট সুযোগ – সুবিধা আমাদের দেশেনেই । তাই ছুটির দিনে নিরাশাভরা মন নিয়ে ঘরে বসে সময় কাটানোই আমাদের জীবনের বৈশিষ্ট্য হয়ে দেখা দেয়।সুতরাং ছুটিরদিনটিকে আনন্দে অতিবাহিত করতে আমাদের দেশে আরো চিত্তবিনোদনের প্রয়োজনীয়তা উপকরণ থাকা দরকার । তবেই ছুটিরদিনের আনন্দ সার্থক হবে।