দেশ ভ্রমণের আনন্দ বাংলা রচনা
ভূমিকা :
“ থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে দেখবো এবার জগতটাকে ” – মানুষ সত্যিই ঘরের কোণে বন্দি হয়ে থাকতে চায় না।
জগৎটাকে সে ঘুরেঘুরে দেখতে চায় , অজানাকে জানতে চায় , অচেনাকে চিনতে চায় । নিত্য নতুনের সাথে পরিচিত হওয়ার এ ইচ্ছা মানুষের সৃষ্টিরশুরু থেকেই।সীমাবদ্ধ জায়গার মধ্যে মানুষ একঘেঁয়ে জীবনযাপনে ক্লান্ত হয়ে পড়ে , হাঁপিয়ে ওঠে । আর তখনই সে বেরিয়ে পড়েঘর থেকে । দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ায় ।
দেশ ভ্রমনের উদ্দেশ্য :
মানুষের ভ্রমণের ইচ্ছা সহজাত প্রবৃত্তি । ভ্রমণের মধ্য দিয়ে যেমন মানুষের জ্ঞানের বিকাশ হয় , তেমনি নানা অজানা জিনিসেরসঙ্গেও তার পরিচিতি ঘটে । কলম্বাস , ভাস্কো দা গামা প্রমুখ পর্যটকদের ভ্রমণের আকাঙ্ক্ষা ছিল বলেই আজ আমরা । অনেকঅজ্ঞাত দেশের পরিচয় পেয়েছি । আমরা ভ্রমণের দ্বারা আল্লাহর মহিমা নানাভাবে উপলব্ধি করতে পারি।
প্রাচীনকালে দেশ ভ্রমণ :
প্রাচীনকালে পৃথিবীতে পথ চলার প্রধান উপায় ছিল পদচারণা । উন্নত যানবাহন ব্যবস্থা না থাকায় একস্থান থেকে অন্যস্থানেযাওয়া কষ্টসাধ্য ছিল।তবুও মানুষ হতাশ হয়নি । স্থলপথে পায়ে হেঁটে , গরু বা ঘোড়ার গাড়িতে , জলপথে ভেলা , নৌকাযোগেস্থানান্তরে গমন করেছে।
বর্তমানে দেশ ভ্রমণ:
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে চলার পথেও ঘটেছে ব্যাপক রদবদল । মানুষ বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান হয়ে আধুনিক যানবাহনেরসাহায্যে পাড়ি জমাচ্ছে জলে , স্থলে , আকাশে , গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে । তাই আজকের ভ্রমণ অনেক স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ । আরামদায়ক ।
শিক্ষা প্রসারে দেশ ভ্রমণ :
শিক্ষা প্রসারে দেশভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম । পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে দিয়ে মানুষ পরোক্ষ জ্ঞানলাভ করে । বই পড়ে দীর্ঘদিন ধরেযা আয়ত্ত করা যায় না , ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে তা সহজেই হৃদয়ঙ্গম করা যায় । ইতিহাস , ভূগোল , উদ্ভিদবিদ্যা , প্রযুক্তিবিদ্যা , সবক্ষেত্রেই দেশ ভ্রমণ সরাসরি জ্ঞানার্জনের পথকে প্রশস্ত করে । তাজমহলের অপরূপ শোভা , ধ্যানগম্ভীর চিরতুষারাবৃত হিমালয়, সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ , সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসস্থূপ , সুন্দরবন , কুতুবমিনার , অজন্তার শিল্প ভাস্কর্য , পর্বত , উপত্যকা , জলপ্রপাত , ইস্পাত কারখানা , তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র , জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রভৃতি দর্শন করে আমরা ইতিহাস , ভূগোল , বিজ্ঞান সম্পর্কে সরাসরিজ্ঞানলাভ করতে পারি । এর ফলে ইতিহাসের নির্জীব ঘটনাবলি আমাদের কাছে সজীব হয়ে ওঠে , গড়ে ওঠে ইতিহাস চেতনা ।
জাতীয় সংহতি স্থাপন :
দেশ ভ্রমণের ফলে এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের , এক গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর অর্থাৎ বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠেপারস্পরিক সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্বের সহজ সম্পর্ক । পরস্পরের মধ্যে ভাষা , সংস্কৃতি , চালচলনের আদান প্রদান ঘটে।গড়ে ওঠেমনুষ্যত্বের এক অপার মহিমা । মানুষের হৃদয়ের প্রসারতা , মনের উদারতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংহতিদৃঢ় হয় ।
দেশ ভ্রমণের আনন্দ :
দেশ ভ্রমণে শুধু শিক্ষা ও জ্ঞানই অর্জিত হয় না , আনন্দও লাভ করা যায় । গতানুগতিক ও একঘেঁয়েমিপূর্ণ জীবন মানুষের পছন্দনয় , মানুষ নতুনত্বের স্বাদ পেতে চায় । আর এ স্বাদ পেতে চায় বলেই মানুষ দেশ ভ্রমণে প্রবৃত্ত হয় । দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে বিভিন্নদেশের , বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় । এ পরিচয়ে পাওয়া যায় স্বর্গীয় আনন্দ ।
উপকারিতা :
দেশ ভ্রমণ শুধু মানুষের প্রত্যক্ষ জ্ঞানের ভান্ডার পরিপূর্ণ করে না , দুর্লভ অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পথকেও প্রশস্ত করে । বিভিন্নঅঞ্চলের মানুষের আচার – আচরণ , পোশাক – পরিচ্ছদ , চাল – চলন , রীতি – নীতি , সমাজ – সংস্কৃতি , ভাষা , খাদ্য শিল্পকলা, জীবনধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায় । সংকীর্ণতাও আত্মকেন্দ্রিকতার গণ্ডি অতিক্রম করে মানুষ বৃহত্তর সমাজেপদার্পণ করে ।
উপসংহার :
সত্যই সুন্দর । মানুষ সুন্দরের পূজারী । সুন্দরের দর্শনে আসে আনন্দ , মানসিক তৃপ্তি । তাই শিক্ষা ও কর্মের বন্ধন থেকে যুক্ত হয়েমানুষ আনন্দ উপভোগের জন্য বেরিয়ে পড়ে দেশ ভ্রমণে । প্রকৃতির রমণীয়ত , পাহাড়ের বিশালতা , অরণ্যের নির্জনতা , ভাস্কর্যেরশিল্প শোভা , স্থাপত্যের কারুকার্য সবকিছুর মধ্যে রয়েছে প্রকৃতির বিচিত্র রূপসৌন্দর্য । তাই সৌন্দর্য প্রেমিক মানুষ প্রকৃতির এই রূপ– সুধা পানের উদ্দেশ্যে ছুটে চলে দেশ – দেশান্তরে । দুঃসাহসিক অভিযান তরুণ প্রাণে আনে আনন্দের জোয়ার । প্রকৃতপক্ষে , দেশ ভ্রমণ জীবনের রুদ্ধ প্রাণের বাতায়ন খুলে মুক্তজীবনের বার্তা বহন করে আনে । ব্যক্তিকে বিশ্বজগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে।