ধূমপান না বিষপান / ধূমপানের অপকারিতা
ভূমিকা :
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ধূমপায়ীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে । ধূমপানের কারণে অধূমপায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে । ট্রেনেরকামরায় , বাসে বা লঞ্চে ধূমপায়ীদের বিড়ি , সিগারেটের ধোঁয়া পরিবেশকে দূষিত করে । ধূমপান না করলেও অধূমপায়ী শিশু , বৃদ্ধ , নারীসহ অনেকেই তামাকের তীব্র বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয় ।
ধূমপানের কুঅভ্যাস :
শৈশব – কৈশোরকাল থেকেই ধূমপানের কুঅভ্যাস গড়ে ওঠে । এটি কুঅভ্যাস , কারণ এতে কোনো উপকার নেই , বরং ক্ষতি হয় ।প্রথমতো শিশুরা খুব কৌতূহলী । তারা সবকিছুরই স্বাদ গ্রহণ করতে চায় । হাতের কাছে যা পায় তাই ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে উপভোগকরতে চায় । বড়দের দেখাদেখিও ছোটরা ধূমপান করতে শেখে । নিছক খেয়ালের বশেও কেউ কেউ ধূমপান করে । নেশায় পরিণতহলেও এ কুঅভ্যাস কেউ সহজে ত্যাগ করতে পারে না । দুষ্ট বন্ধু ও ধূমপায়ীর সংসর্গে থাকলে ধূমপানের অভ্যাস গড়ে ওঠে ।ছোটরা খুবই অনুকরণপ্রিয়।তাই দর্শনীয় বিজ্ঞাপনের রঙিন নেশার ভাবভঙ্গি দেখে ছোটরা সিগারেট , পাইপ ইত্যাদি টানতে চায় ।সিনেমায় , টিভি পর্দায় , পত্রিকার পাতায় , রাস্তার বিজ্ঞাপন বোর্ডে তামাক কোম্পানিগুলো চমকপ্রদ ভাষায় ধূমপানের গুণ , ভাবভঙ্গি , ব্যক্তিত্বের মহিমা প্রচার করে । বাড়িতে সিগারেট ও দিয়াশলাই সহজলভ্য হলে কেউ আর কাউকে ফেরাতে পারে না।
ধূমপানের ক্ষতিকর দিক :
নানা জাতের তামাক দিয়ে প্রস্তুত হয় সিগারেট , বিড়ি ইত্যাদি । তামাকের সাথে সুগন্ধি রাসায়নিক দ্রব্যও । মেশানো হয় । তাইকেউ কেউ হুক্কা , পাইপ ব্যবহার করে ধূমপান করে থাকে । যেভাবেই পান করা হোক না কেন ধূমপানের ফলে শরীরের ক্ষতি হবেই। তামাকে থাকে নিকোটিন নামক তীব্র বিষ । ধূমপানে সেই নিকোটিন বিষ গ্রহণ করা হয় । প্রতিটি সিগারেটে বা বিড়িতে পাঁচথেকে ছয় মিনিট আয়ু কমে যায় । ধূমপানের ফলে নানারূপ দুরারোগ্য ব্যাধি দেখা দেয় । এর প্রভাবে নেশাগ্রস্ত ভাব সৃষ্টি হয় ।মস্তিষ্ক হয় প্রায় অচল । এ অচলাবস্থার জন্য মস্তিষ্কে কোনো চিন্তাই সহজে চালিত হয় না বা কোনো প্রশ্নের সঠিক মীমাংসা আসেনা। তৎক্ষণাৎ যা আসে তা খুবই হঠকারী সিদ্ধান্ত । দেহে , মনে , ব্যক্তিত্বেও সারা জীবনে একজন ধূমপায়ী মারাত্মকভাবেক্ষতিগ্রস্ত হয় । অর্থহানির সঙ্গে ঘটে স্বাস্থ্যহানি্যার পরিণাম মৃত্যু ।
ধুমপানের অনিবার্য প্রতিক্রিয়া :
যেভাবেই ধূমপান করা হোক না কেন , এর অনিবার্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবেই । জাতীয় অধ্যাপক ডা . নূরুল ইসলাম বলেন, “ ধূমপানের কারণে আপাদমস্তক মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গে কুফল দেখা দেয় । ধূমপানে অনেক বিচিত্র ধরনের রে । হতে পারে ।ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি । ধূমপানের বিষক্রিয়া প্রথমে ফুসফুস ও পরে রক্তের সঙ্গে মিশে শরীরের নানাজায়গায় ছড়িয়ে পড়ে । ফলে দেখা দেয় যক্ষ্মা , ব্রংকাইটিস , দন্তক্ষয় , ক্ষুধামান্দ্য , গ্যাস্ট্রিক আলসার , হৃদরোগ , মাথাঘোরা , এমনকি চোখের দৃষ্টি পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায় এবং ঠোট , মুখ , দাঁত ইত্যাদির মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে ধূমপানে । ” তিনি আরোবলেন , “ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান।এ কুঅভ্যাস হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালনেও বাধা সৃষ্টি করে থাকে ।
প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা :
ধূমপান যে বিষপান আর বিষপানের অর্থ যে মৃত্যু সে সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন । সমাজে ধূমপানের বিরুদ্ধেসচেতন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত । ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ ’ আইন পাস করেছেএবং এর আশু ফলও পাওয়া যাচ্ছে । আমাদের দেশে মহিলারা ( ব্যতিক্রম বাদে ) ধূমপান করে না । মা , বোন , স্ত্রী । হিসেবেধূমপানের বিরুদ্ধে তারা যোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন । জাতীয় প্রচার মাধ্যমে ধূমপান বিরোধী প্রচার অব্যাহত রাখা , প্রকাশ্য বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং সিগারেটের গায়ে বিষপানের কথাটি লেখতে বাধ্য করা কর্তব্য । ধূমপানমুক্তএলাকা গঠন ও ধূমপানহীন দিবস এবং সপ্তাহ পালন করা উচিত । ধূমপানের বদভ্যাস ছাড়ানোর জন্য প্রতিষেধক আবিষ্কারকরাও জরুরি । বড়রা ইচ্ছাশক্তি ও প্রতিজ্ঞাপূর্বক ধূমপান ত্যাগ করতে পারে । নেশাগ্রস্ত ও ছোটদের কুঅভ্যাস ছাড়াবার ব্যবস্থাকরতে হবে ।
ধূমপান না করার উপকারিতা :
অধূমপায়ী ব্যক্তি দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় । তার হৃৎপিণ্ড কার্যকরভাবে চালু থাকে বলে হৃদরোগ আক্রান্ত হওয়ারসম্ভাবনা কম থাকে।সে ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকে।তার মনোবল সর্বদা সুদৃঢ় থাকে এবং অকালে জীবন ধ্বংসের ঝুঁকিথেকে মুক্ত থাকে ।
উপসংহার :
মানুষের অসাধ্য বলে কিছুই নেই । নেশামুক্ত হবার পরিবেশ ও উৎসাহ সৃষ্টি হলে ধূমপান কমতে পারে এমনকি দূরীভূতও হতেপারে । এ সুন্দর পৃথিবীতে সবাই জীবনকে ভালোবাসে । ধূমপান আত্মহত্যার সামিল একথা বোঝতে পারলেই কেউ ধূমপানকরবে না । এতে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক দায়িত্ববোধে এর জাগরণ।