বাংলা রচনা সমগ্র

নৌকা ভ্রমণের আনন্দ বাংলা রচনা

ভূমিকা :

ভ্রমণ শিক্ষারই অংশ সর্বস্তরের মানুষই ভ্রমণ করতে ভালোবাসে জীবনের একঘেয়েমি কাটাবার জন্য মাঝে মাঝে ভ্রমণ করাখুবই আনন্দদায়ক ভ্রমণে জীবনের জড়তা কাটে , অবসাদ দূর হয় এবং নতুন কর্ম উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় বিভিন্ন ধরনের ভ্রমণেরমধ্যে নৌকা ভ্রমণ আরো বেশি আনন্দদায়ক তাই মাঝে মধ্যে সবারই ভ্রমণ করা উচিত।

সিদ্ধান্ত আয়োজন :

সামনে শীতকালীন ছুটি , এক সপ্তাহ শীতের অবকাশকে কীভাবে অতি সুন্দর করে উপভোগ করা যায় , সে লক্ষ্যে আমরাকয়েক বন্ধু মিলে স্থির করলাম নৌকা ভ্রমণে যাব আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরের দিন সকাল টায় নারায়ণগঞ্জ টার্মিনালঘাটে গিয়ে সুন্দর দেখে একটি নৌকা ভাড়া করলাম নৌকায় দুজন বলিষ্ঠ মাঝি আর আমরা পাঁচ বন্ধু গন্তব্যস্থান ৩০কিলোমিটার দূরবর্তী আমার বড় বোনের বাসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ সার কারখানার স্টাফ কোয়ার্টার।

যাত্রা শুরু:

আমরা ভ্রমণকে উপভোগ্য করার জন্য সব রকমের উপকরণ এবং হালকা কিছু নাস্তা নিয়ে নৌকায় উঠলাম শীতের সকাল , কুয়াশা ভেদ করে সূর্য তার ঝলমলে রূপ চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে মেঘমুক্ত নীল আকাশ , মৃদুমন্দ বাতাস অনুকূলে প্রবাহিত হচ্ছে মাঝিরা নৌকা ছেড়ে দিল ধীরে ধীরে আমাদের নৌকা গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হতে লাগল নদীর কলকল ধ্বনি , নৌকা চলারসরসর শব্দ আমাদেরকে খুবই আনন্দ দিচ্ছিল এক বন্ধু ছইয়ের ওপর বসে উচ্চস্বরে গান শুরু করল , আরেক বন্ধু বাঁশিবাজাতে লাগল অপরদিকে , রেডিও বাজছিল আর আমরা দুবন্ধু মিলে গল্প করছিলাম এবং নদীর তীরের দৃশ্য দেখছিলাম

নদীর তীরের দৃশ্য :

নৌকা শীতলক্ষ্যা পেরিয়ে মেঘনা নদীতে পড়েছে নদীর তীরের গ্রামগুলোকে ছবির মতো সুন্দর মনে হচ্ছে নদীর তীর ঘেঁষে চড়াভূমিতে সবুজ ধানের চারাগুলো বাতাসের সাথে সোহাগি খেলা খেলছে হলদে বরণ সরষে ক্ষেত অপরূপ দৃশ্যের অবতারণাকরছে নদীর তীরে বিভিন্ন ঘাটে শত শত নারীপুরুষ গোসল করছে কুলবধূরা কলসি কাঁখে পানি আনতে যাচ্ছে কোথাওরাখালেরা গরুর পাল নিয়ে মাঠে চলছে আবার কোথাও ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নদীর বালুকাময় তীরে মনের আনন্দে খেলছে নদীর তীরের মনোমুগদ্ধকর দৃশ্যাবলি আমাদেরকে অভিভূত করে দিল।

নদীর বুকের দৃশ্য :

মাঝিরা অনুকূল বাতাস পেয়ে পাল তুলে দিয়ে হাল ধরে বসে মনের সুখে ভাটিয়ালি গান ধরেমন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমিআর বাইতে পারলাম না।আমি সারাজীবন উজান বাইলাম ভাটির নাগাল পাইলাম না।প্রশস্ত মেঘনার বুকে মাঝিদের উদাসকরা গানের সুর আমাদের মুগ্ধ করে দিল।আমাদের নৌকার পাশ দিয়ে অনেক ইঞ্জিনচালিত নৌকা দ্রুত গতিতে চলে গেল সারিসারি জেলে নৌকা নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরছে মাঝে মাঝে ঝাকে ঝাকে গাঙচিল আমাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল কালো রঙের বালিহাঁস , পানকৌড়ির সাঁতার কাটার দৃশ্য সত্যিই অতি সুন্দর।

গন্তব্যস্থলে পৌছা :

দুপুর নাগাদ আমরা গন্তব্যস্থলে পৌছালাম দীর্ঘ সময় লাগলেও ভ্রমণের আনন্দে সময় যে কীভাবে কেটে গেল আমরা তার টেরইপাইনি বড় আপার বাসা প্রায় নদীর তীরেই আমাদের দেখে আপাদুলাভাই খুশি হলেন আমরা মেঘনার চিতল মাছ দিয়েআপ্যায়িত হলাম শীতের দিনের চিতল মাছের স্বাদ যেন মুখে লেগেই রইল আমরা প্রত্যেকে একশত টাকা করে বকশিস নিয়েবিকালবেলা রওনা হলাম

সন্ধ্যাবেলার দৃশ্য :

ফেরার পথে ভাটির টানে নৌকা দক্ষিণ দিকে এগিয়ে চলছে ক্রমে দিনের অবসান হলো। অন্তিম সূর্যের উজ্জ্বল বর্ণ গগনে শোভাপেতে লাগল নদীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গগুলো গলিত স্বর্ণের ন্যায় টলমল করতে লাগল পাখির ঝাঁক নীড়ে ফিরে যেতে লাগল

রাতের দৃশ্য :

রাতের অন্ধকার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল তীরস্থিত কুটিরে আলো জ্বলে উঠল শীঘ্রই অন্ধকারের বুক চিরে আকাশে ঠাণ্ডাগোলগাল রূপালি চাঁদ হেসে উঠল চাঁদের আলোতে মেঘনার কালো জল রূপালি রং ধারণ করল শীতের কনকনে বাতাসেআমরা জড়সড় হয়ে বসে রইলাম কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তার ঠিক নেই।মাঝিদের ডাকে জেগে দেখি বৈদ্যুতিক বাতিরআলোতে = আলো ঝলমল নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল ঘাট আমাদের নৌকা ভ্রমণ এভাবে শেষ হলো।

উপসংহার :

ভ্রমণে আছে আনন্দ , আছে উল্লাস , কিছু দুঃখকষ্টও থাকতে পারে তবুও ভ্রমণের শিক্ষণীয় দিকগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে  ব্যক্তিমাত্রই ভ্রমণ করা উচিত।তাই নৌকা ভ্রমণই হোক কিংবা অন্য কোনো ভ্রমণই হোক সুযোগ পেলেই আমাদের ভ্রমণ করাউচিত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button