বঙ্গবন্ধু ও বিজয় দিবস রচনা 💖(নতুন)

ভূমিকা :
বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও জাতির জীবনে যে দিনটি প্রতিটি নাগরিকের নিকট স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছে এবং যে দিনটির একটিঐতিহাসিক পটভূমি ক্ষণে ক্ষণে প্রত্যেকের মনে দাগ কাটে । সে দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । এ দিনটিসরকারি ও বেসরকারিভাবে আনন্দ , দুঃখ , বেদনার মধ্য পালিত হয়ে থাকে । বাঙালির জাতীয় জীবনে বিজয় দিবস হিসেবে ১৬ডিসেম্বর এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবজনক দিন । এই দিনে বিজয়ের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশের গৌরবময়আবির্ভাবকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদার আসন লাভ করে ।
বিজয় দিবসের ইতিহাস:
বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সাথে জাতির রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস জড়িত । ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত থেকে মুক্তিসংগ্রামের সূচনা হলেও বাঙালিদের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল আরও বহুদিন আগে থেকে । বস্তুতপক্ষে , ১৯৪৭সালের দেশ বিভাগের ফলশ্রুতি হিসেবে যে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল তা বাঙালি জাতিকে ক্রমান্বয়ে দুঃখ – দুর্দশার দিকে ঠেলেদিতে থাকে । পশ্চিমাদের শোষণ থেকে মুক্তি লাভের প্রবল ইচ্ছা পাকিস্তান সৃষ্টির প্রায় প্রথম থেকেই শুরু হয় । তবে পরবর্তীকালেনানা আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রবল আকার ধারণ করতে থাকে । মাতৃভাষার মর্যাদায় রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিএক রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মাধ্যমে গণআন্দোলনের বিস্ফোরণ ঘটে । সকল ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে সালাম , বরকত , রফিক , জব্বার, শফিউরসহ আরও অনেক শহিদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের মাতৃভাষার অধিকার এবং স্বাধিকার আন্দোলনেরসূত্রপাত । পরবর্তীকালে একুশের চেতনা নিয়ে এদেশের মানুষ ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটায় । পরিণামে পশ্চিম শাসকেরাবাঙালিদের স্বাধিকারের ন্যায্য দাবিকে নস্যাৎ করার জন্য শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমননীতি চালাতে থাকে । ১৯৭১ সালের ২৫মার্চ তারিখের দিবাগত রাতে বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু হয় । কিন্তু বাঙালিরাও মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করতে প্রস্তুত ছিল না । তাইতারা ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ায় । বাঙালিরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলে এবং যার যা ছিল তাই নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে ঝাপিয়েপড়ে। সুদীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ চলে । অসংখ্য বাঙালি মুক্তিসেনা হিসেবে অংশগ্রহণ করে । এক কোটি লোক প্রাণেবাঁচার জন্য স্বদেশের মায়া ত্যাগ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নিতে হয় । ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর সঙ্গেযোগ দিয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় । মুক্তিবাহিনী দেশের ভেতর ও বাইরে শত্রুদের পর্যন্ত করার লক্ষ্যে দুর্বারসংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে । অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর তারিখে মুক্তিসেনা ও ভারতীয় সেনাবাহিনী তথা মিত্র বাহিনীর কাছেপাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করে । পাশপাশি পূর্ব পাকিস্তান পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি লাভ করে নতুনরাষ্ট্র বাংলাদেশ নামে আত্মপ্রকাশ করে । তাই এই দিনটি অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় দিবস হিসেবে চিহ্নিত।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য :
আমাদের জাতীয় জীবনে এ বিজয় দিবসের বিশেষ তাৎপর্য আছে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ বিজয় এসেছে বলেআমাদের জাতীয় জীবনে এর মর্যাদা অনেক । এ বিজয় আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে স্বাধীনতার ফল– আমরা এখন মুক্তজীবনযাপন করতে পারছি । বীর জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় এ বিজয়ের ফল । একদিন নির্যাতিত বাঙালি প্রতিজ্ঞা করেছিল— “ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জ্বলন্ত ঘোষণার প্রতিধ্বনি তুলে , নতুন নিশান উড়িয়ে , দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক এইবাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা । বিজয় দিবস আমাদের বহু ত্যাগ আর সাধনার স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে । তাইবিজয় দিবসের মূল্য অপরিসীম ।
উপসংহার :
বাংলাদেশ এখন নয় কোনো শিশু রাষ্ট্র , নয় কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ । প্রাপ্তির আলোয় আজ প্রত্যাশাকে দেখার সময় , সামনেএগিয়ে যাবার পরমক্ষণ , ভবিষ্যৎ স্বপ্নের মুহূর্ত । তাই বিগত বছরগুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন করে তা থেকে আমাদেরকেশিক্ষা নিতে হবে । শপথ নিতে হবে সুখী – সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের । ব্যর্থতার ভিতে গড়ে তুলতে হবে ভবিষ্যৎ সাফল্যের মিনার ।একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে আমাদের । কবির ভাষায় সকলকেসমস্বরে বলতে হবে–
“ এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি ।