বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস রচনা💖

ভূমিকা :
“ স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায় । দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে ‘ কে পরিবে পায় । ” স্বাধীনতামানুষের জন্মগত অধিকার । বায়ু ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না , তেমনি স্বাধীনতা ছাড়া কোনো জাতির আত্মবিকাশ হতেপারে না । তাই একটি জাতির জন্য স্বাধীনতা দিবসটি হলো পরম পাওয়ার দিন , স্মরণীয় দিন । বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসহলো ২৬ মার্চ । আমাদের জাতীয় জীবনে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম ।
স্বাধীনতার পটভূমি :
১৯৪৭ সালে প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং আমাদের দেশ পাকিস্তান নামে স্বাধীন হয় । কিন্তু পশ্চিমাশাসক গোষ্ঠী আমাদের পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের কলোনী বানাতে চায় । তারা দেশের সামরিক , বেসামরিক ও আর্থিক কাঠামোরউপর আধিপত্য বিস্তার করে । ফলে দেশবাসীর মনে অসন্তোষ দেখা দেয় । বাংলা ভাষাকে তারা স্বীকার করতে চায় না । তাদেরউর্দু ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল । ১৯৫২ – এর ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে যখন তরুণসমাজ তৎকালীন সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করে , তখন পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী মিছিলেনির্বাচারে গুলি ছুড়ে । এতে জব্বার , বরকত , সালাম , রফিক ও শফিউরসহ আরো অনেকে শহিদ হন । এর ফলে স্বাধীনতার প্রশ্নসামনে এসে যায় । এ আন্দোলনের ধারায় আসে ১৯৫৪ – এর সাধারণ নির্বাচন , ১৯৬৬ – এর ৬ দফা আন্দোলন , ১৯৬৯ – এরগণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ – এর সাধারণ নির্বাচন । ১৯৭০ – এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাঅর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয় । ১৯৭১ – এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতেপাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের বুকে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় । এ রাতেই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নং সড়কেরবাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় । গ্রেফতারের আগে মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতা দিবস :
১৯৭১ – এর ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় । ১৭এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতিনিযুক্ত করা হয় । পুরো বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ । নয় মাসে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অগণিতশহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ – এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার বিজয় অর্জিত হয় । তাই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসহিসেবে পালিত হয়।
স্বাধীনতা দিবসের চেতনা:
আমাদের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের চেতনা অত্যন্ত ব্যাপক ও গভীর । ২৬ মার্চের আহ্বানে অধিকারহারা এ দেশবাসীঅধিকার আদায়ের জন্য , পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পাবার জন্য , সকল প্রকার জুলুম – নির্যাতন নিষ্পেষণ থেকে রক্ষাপাবার জন্য পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল । যে মহান উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে এদেশবাসী স্বাধীনতা অর্জন করেছিল , স্বাধীনতার চার যুগ পরেও তা যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়নি । ২৬ মার্চের চেতনা যেভাবে মানুষকে তার অধিকার এনে দিয়েছে , স্বাধীনতা দিয়ে সেটাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করলে আজকের প্রজন্ম স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারবে ।
জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবস:
প্রতি বছর আমাদের মাঝে স্বাধীনতা দিবস ফিরে আসে । এ দিন থেকে আমরা সংগ্রামের প্রেরণ পাই । কারো কাছে অন্যায়ভাবেমাথা নত করা যাবে না , কারো নির্যাতন – নিষ্পেষণ মেনে নেয়া যাবে না– এই মহান শিক্ষা দিয়েছে । স্বাধীনতা দিবস । অন্যায় , জুলুম , নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে জীবনকে সুখী – সমৃদ্ধ ও গৌরবান্বিত করার দৃপ্ত শপথ এ মহান পবিত্র দিন থেকেআমরা পেয়ে থাকি ।
সাহিত্য – সংস্কৃতিতে স্বাধীনতা দিবস:
বাংলাদেশের সাহিত্য – সংস্কৃতিতে স্বাধীনতা দিবসের গভীর প্রভাব রয়েছে। স্বাধীনতা দিবস তথা স্বাধীনতাকে কেন্দ্র করে অসংখ্যকবিতা গল্প , প্রবন্ধ , কাব্যগ্রন্থ গান ও নাটক রচিত রয়েছে । মূলত দেশ স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের সাহিত্য – সংস্কৃতিরসবটুকু অংশ জুড়েই স্বাধীনতা বিরাজ করছে।
উপসংহার:
স্বাধীনতা দিবস প্রতি বছরই পালিত হয় । কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার কী উদ্দেশ্যে এবং কী পটভূমিতে আমাদের এমহামূল্য স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে । আমাদের স্বাধীনতা সমাজের গুটিকয়েক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নয় । আমাদেরস্বাধীনতা দারিদ্র্য , সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ । বহু শহিদের রক্তেরবিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা যাতে কারও ব্যক্তিগত বা দলগত চোরবালিতে পথ না হারায় , সেই প্রতিজ্ঞা গ্রহণই হলো আমাদেরস্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আসল ও প্রধান উদ্দেশ্য । আমরা রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করেছি , কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিকস্বাধীনতা এখনো অর্জিত হয়নি। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হলে তবেই আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণাঙ্গ হবে।