বাংলা রচনা সমগ্র

বাংলাদেশের নদ – নদী (রচনা)

ভূমিকা :

প্রতিটি দেশের ভৌগোলিক অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নদীর গুরুত্ব খুব বেশি বলা যায় , নদীর অবদানেই কোনো দেশ তারনিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ ছোট বড় অসংখ্য নদনদী দেশের বুকের ওপর জালের মতছড়িয়ে রয়েছে এত বেশি নদনদী পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই নদীর স্রোতধারায় বাহিত পলি দ্বারা পুষ্ট এদেশের মাটি ব্যবসাবাণিজ্যের পণ্য সামগ্রী পরিবহনে এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রেও আমাদের নদনদীর গুরুত্ব অপরিসীম নদনদীগুলোরনাম : বাংলাদেশের প্রধান বড় নদী তিনটি হলো:পদ্মা , মেঘনা যমুনা এছাড়া রয়েছে ছোট বড় বহু শাখা উপনদী ; যেমনধলেশ্বরী , বুড়িগঙ্গা , শীতলক্ষ্যা , আত্রাই , গড়াই , তিস্তা , সুরমা , কুশিয়ারা , বংশাই , মধুমতি , আড়িয়াল খাঁ , মাতামুহুরী এবং আরো অনেক

নদীর অবস্থা :

বাংলাদেশের নদীগুলো বিস্তৃত বর্ষায় নদীগুলোকে সাগরের মতো বলে মনে হয় নদীগুলো বর্ষায় পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে অত্যধিক পানিপ্রবাহে বন্যার সৃষ্টি হলে নদীগুলো ভয়ঙ্কর দৃশ্যের অবতারণা করে মাঝে মধ্যে নদী অশান্ত হয়ে ওঠে তাদেরউত্তাল তরঙ্গ অনেক সময় লণ্ডভণ্ড করে দেয় জনজীবন সব নদীর আকৃতি প্রকৃতি এক নয় কোনোটি খণ্ডিত , কোনোটিমন্থর , আবার কোনোটি দুর্বার শক্তিময়ী বৈশাখজ্যৈষ্ঠে নদনদীর দুর্দান্ত শক্তি অনেকখানি দুর্বল হয়ে পড়ে কোনো কোনোনদী আবার শুকিয়ে যায় তখন নদীর বুকে জেগে ওঠে বালুচর নানা কারণে আজ আর আমাদের নদীগুলোতে আগের মতোপানি প্রবাহ নেই ভারত কর্তৃক গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে পদ্মা শুকিয়ে যাচ্ছে নদীবাহিত পলিতে নদীগুলোভরাট হচ্ছে ফলে নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে যার ফলে প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে ভৌগোলিক পরিবেশের ওপর।

বাংলাদেশের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব :

নদী বাংলাদেশের জীবনদায়িনী শক্তি এদেশের নদনদীর তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য , নগর , বন্দর শহর এখানকারমানুষের ওপর নদীর প্রভাব অপরিসীম নদী এদেশকে করেছে শ্যামল সৌন্দর্যে অপরূপা নদীর সাথে মিশে আছে দেশেরইতিহাস সম্ভবত কোনো এক সুদূর অতীতে নদী থেকেই উৎপন্ন হয়েছে শ্যামল প্রান্তর ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের বাংলাদেশনদীরই দান যুগ যুগ ধরে এদেশের বেশিরভাগ ব্যবসাবাণিজ্য চলছে নদীর পথ ধরেই আবার নদীর উত্তালতরঙ্গের সাথে সংগ্রাম করেই এদেশের মানুষকে বেঁচে থাকতে হয় তাই লড়াই সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় এদেশের মানুষনদীগুলোকে কখনো বন্ধু রূপে কখনো বা ভয়ঙ্কর শত্রু রূপে কল্পনা করে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নদ নদীগুলোর প্রভাবঅস্বীকার করা যায় না

নদীর সৌন্দর্য :

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ নদীগুলো দেশের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে একেক ঋতুতে নদীগুলো একেক রূপধারণ করে শীতে এদের এক রূপ , গ্রীষ্মে আবার অন্যরূপ ; কিন্তু বর্ষায় সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ বর্ষায় বাংলার নদীগুলো হয়ে ওঠে পূর্ণযৌবনা নদীগুলো পানিতে ভরে ওঠে আপনদেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে আবার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে দুতীরে প্লাবিত করে সৃষ্টিকরে বন্যার পানিতে মগ্ন নদীর ঘাট , তীরবর্তী ভূমি , লোকালয় এবং বন্যা প্লাবিত গ্রামগুলোকে তখন দ্বীপের মতো মনে হয় ধানের শিষগুলো জলের পরশে শ্যামল হয়ে মৃদু বাতাসে দুলতে থাকে প্লাবিত বন্যার পানিতে চলে সোনার তরীর আনাগোনা ছোট ছেলেমেয়েরা কলার ভেলায় সাগর পাড়ি দেয়ার আনন্দ অনুভব করে আবার শরতে নদীগুলো শান্ত হয়ে ওঠে এবং পানিরপরিমাণও অনেকটা কমে যায় তখন শুভ্র আকাশ মেঘের পর্দা সরিয়ে নদীগুলোর দিকে অতৃপ্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে ধানেরওপর বাতাসের ঢেউ , কূলে কূলে ভরা নদীর তীরে কাশফুলের শ্বেতশুভ্র হাসির তরঙ্গ বাস্তবিকই মনকে উদাস করে

নদীর সম্পদ :

নদীর প্রধান সম্পদ পানি মাছ আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত মাছ দেশের নদীগুলো থেকেই আমরা শতকরা আশি ভাগমাছ পেয়ে থাকি ইলিশ , চিংড়ি , রুই , কাতল , চিতল , পাঙ্গাস প্রভৃতি মাছ কচ্ছপ রপ্তানি করে আমরা মূল্যবান বৈদেশিকমুদ্রা অর্জন করে থাকি

উপকারিতা :

নদী আমাদের দেশের প্রাণ নদীই এদেশকে সুজলাসফলা শস্যশ্যামলা সোনার বাংলাদেশ রূপে গড়ে তুলেছে নদীআমাদের চাষের জমিতে বয়ে আনে পলি , করে উর্বর , যোগায় সেচের পানি , সরবরাহ করে পর্যাপ্ত মাছ দেশের আভ্যন্তরীণযাতায়াত , মালামাল পরিবহন ব্যবসাবাণিজ্যের অধিকাংশই নদীপথে হয়ে থাকে নদীই আমাদের জীবনকে করে গতিময় প্রাণবন্ত

অপকারিতা :

নদীতে বন্যা হলে জমির ফসল , রাস্তাঘাট , গ্রাম এমনকি শহর পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায় ফলে মানুষের চলাচলের ভীষণঅসুবিধা হয় সর্বোপরি মানুষ নানা রোগে জর্জরিত হয়ে পড়ে বন্যার পানিতে ফসলের ক্ষতি হয় , কিন্তু উপকারের তুলনায়এসব ক্ষতি অতি নগণ্য

উপসংহার :

নদী আমাদের জীবনকে করেছে নিয়ন্ত্রিত , দেশকে করেছে সমৃদ্ধ এবং মানুষকে করেছে উন্নয়নশীল তাই সরকার যদি নদীগুলোর গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ , প্রয়োজনে পুনঃখনন সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসেন তবেই বাংলাদেশের উন্নতিহবে নদীর উপরই নির্ভর করছে আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button