বাংলাদেশের পাখি / আমাদের পরিচিত পাখি
ভূমিকা :
বাংলাদেশের শোভা তার সবুজ – শ্যামল তরুলতা , আর অসংখ্য পাখি । ঘরের আশে – পাশে , গাছের ডালে – ডালে , ঝাপেঝাড়ে , মাঠে – ঘাটে , নদী – নালায় সর্বত্র হাজার পাখির মেলা , হাজার কষ্ঠের কাকলি।এ পাখিরা আমাদের অতি ঘনিষ্ঠপ্রতিবেশী । সকালে পাখির ডাকে এদেশের মানুষের ঘুম ভাঙে , আবার পাখির কলরব স্তব্ধ হবার আগেই মানুষ ঘরে ফিরে আসে। পাখি ছাড়া রূপসী বাংলাদেশকে ভাবা যায় না । পাখি এদেশের খাল – বিল ,ঝাড় , নদী – নালা ও বন – জঙ্গলে এক অপূর্বশোভা বিস্তার করে রেখেছে।
বিভিন্ন প্রকার পাখি:
বাংলাদেশে স্থলচল , জলচর ও উভচর– এ তিন ধরনের পাখি আছে । সব পাখিরই অত্যন্ত শক্তিশালী দুটি পাখা রয়েছে । এদেরসারা শরীর পালকে ঢাকা এবং শরীরের ওজন অনেকটা হাল্কা । এ কারণে পাখি যত্রতত্র উড়ে বেড়াতে পারে । আমাদের দেশেসারাবছর যেসব পাখি দেখা যায় কেবল সেগুলোকেই দেশি পাখি বলা হয়। শালিক , চড়ুই , বুলবুলি , ঘুঘু , ময়না , পায়রা , দোয়েল , কাক , চিল , শকুন ইত্যাদি আমাদের দেশীয় পাখি ।
জাতীয় পাখি :
অতি প্রত্যুষে যে পাখির একটানা সুরে আমাদের ঘুম ভাঙে সেটি দোয়েল । কালো আর সাদা রঙের পাখিটি আমাদের ঘরেরপাশের ঝাঁপেই দেখতে পাওয়া যায় । দোয়েল বাংলাদেশের জাতীয় পাখি । পপাষা পাখি ; পাখির দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ ।পাখির রং আর মানুষের মন একাত্ম হয়ে আছে চিরসবুজের এ বাংলাদেশে ।
কবির ভাষা
“ পাখ – পাখালি গানের ছলে মনের কথা বলে । তাই এদেশের মানুষ পাখি পুষে তৃপ্তি পায় । হাঁস , মোরগ , কবুতর , ময়না , টিয়া, সারস ইত্যাদি পোষা পাখি । এসব পাখি পুষে এদেশের মানুষ অতি সহজে পেয়ে থাকে মাংস ও ডিমের মতো পুষ্টিকর খাদ্য ।তাছাড়া অনেকে পাখি পোষে অথনৈতিক কারণেও । পোষা পাখি বিক্রি করে আজকাল অনেকেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে ।মিষ্টি মধুর ডাকাডাকি বা গান শোনার জন্যে মানুষ বনের পাখি খাঁচায় বন্দী করে পোষে মানায় । ইংরেজি Poultry বলতে যেগৃহপালিত বা শিকার যোগ্য পাখিকুল বুঝায়– বাংলায় গৃহপালিত বা পোষা পাখি সেগুলোই ।
গানের পাখি :
গানের দেশ , সুরের দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ । এদেশের পাখির কণ্ঠে ধ্বনিত হয় সুমধুর সুর । বউ কথা কও , কোকিল , দোয়েল , পাপিয়া , বসন্ত প্রভৃতি গানের পাখি বলে ব্যাপক পরিচিত । সুমধুর কণ্ঠস্বরের জন্যে কোকিল সবার কাছেই প্রিয় ।বুলবুলিও গানের পাখি বলে পরিচিত । পাখা ও লেজ ছড়িয়ে যখন বুলবুলি গান গাইতে থাকে তখন প্রকৃতির কোলে আনন্দেরঢেউ খেয়ে যায় । কবি লেখেছেন
“ বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল। ”
বসন্তের পাখি :
ঋতুরাজ বসন্তের ঘুম ভাঙার জন্যেই যেন কোকিল মধুর সুরে ডাকতে থাকে কুহু কুহু ‘ । কোকিল বসন্তের পাখি । ঋতুরাজ বসন্তেরদোসর । নির্জন ফায়ূনের দুপুরে তার উদাস করা সুরে বাংলার প্রকৃতি স্পন্দিত হতে থাকে । হলুদবরণ পাখি , বউ কথা কও , কোকিলের মতোই বসন্তের অতিথি । বসন্তের দিনে তাদের গান শোনা যায় । তবে বসন্তের পাখিগুলোর মধ্যে কোকিলই সর্বশ্রেষ্ঠকবির ভাষায়
“ কাকের কঠোর রব বিষ লাগে কানে , কোকিল অখিল প্রিয় সুমধুর গানে । ”
অতিথি পাখি :
শীত মৌসুমের শুরুতে হাজার হাজার যাযাবর পাখি হিমালয় অথবা সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে আমাদের দেশে । দলবদ্ধভাবেউড়ার সময় এরা সাধারণত উল্টো ইংরেজি ‘ ডি ’ অক্ষরের মতো হয়ে চলে । সারা শীত এরা মুখর করে রাখে । বাংলাদেশেরজলাভূমি । তারপর উষ্ণ বায়ু প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে এসব যাযাবর পাখির আবার বিরামহীন ছুটে চলা শুরু হয় । তখন এর ফিরেযেতে থাকে নিজ নিজ দেশের দিকে । এদের মধ্যে বালিহাঁস , বলাকা , পিপিট , খঞ্জন , কাদা – খোঁচা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।বাইরের দেশ থেকে এরা আমাদের দেশে আসে বলে এদেরকে অতিথি পাখি বলা হয় ।
পাখি নিধন :
একসময় যখন এদেশ ইংরেজদের কবলে পতিত হয়েছিল তখন তারা নির্মমভাবে গ্রামবাংলার পাখিকে নিধন করেছিল ।বলাবাহুল্য যে , তাতে গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে , তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেই নিষ্ঠুর ঘাতকের মতো হত্যা করা হয়েছিল । এমন ঘটনবর্তমানে অহরহ ঘটছে । রূপসী গ্রামবাংলার এ রূপ – ক্ষয় প্রতিরোধ করার জন্য জাতীয়ভাবে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে । ঘুমিয়েপড়ে , পাখির ডাকেই জেগে ওঠে । বাংলাদেশের পাখি গ্রামবাংলার প্রকৃতির রূপ মাধুরীর অবিভাজ্য অঙ্গ ।
উপসংহার:
বস্তুত গ্রামবাংলার সঙ্গে পাখি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত , জড়িত গ্রামীণ মানুষের জীবনেও । গ্রামের মানুষ পাখির ডাকে ঘুমিয়েপড়ে, পাখির ডাকেই জেগে ওঠে।