বাংলা রচনা সমগ্র

মাদকসক্তির অপকারিতা ও প্রতিকার

ভূমিকা :

মানুষের নেশা করার প্রবণতা বহু প্রাচীনকাল থেকে এসেছে কিন্তু সাম্প্রতিককালে নেশা একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণতহয়েছে এবং সারা বিশ্বে এটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বর্তমান যুগকে মাদকাসক্তিরই যুগ বলা হয় মাদকাসক্তি এমন একটিদুর্বার নেশা যাতে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা পরিত্যাগ করা খুবই কঠিন মাদক বা নেশার দ্রব্যের প্রতি মারাত্মক আসক্তিব্যক্তি জীবনে যেমন সর্বনাশ সৃষ্টি করছে , তেমনি জাতীয় জীবনকেও এক ভয়াবহ পরিণামের দিকে ঠেলে দেয়

মাদকাসক্তির কারণ :

মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি একদিনে বা হঠাৎ করে হয় না দিনে দিনে এর প্রতি আসক্তি জন্মায় মাদকাসক্তি সমস্যাটির মূলেবহুবিধ কারণ রয়েছে এর মধ্যে প্রধান প্রধান কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

. হতাশা :

মানুষ নিজেকে নিয়ে অনেক উচ্চ আশা পোষণ করে আশা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তখন তার জীবনে হতাশা নেমে আসে সেই হতাশা থেকে মুক্তির জন্য সে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে

. চিরন্তন নতুনত্বের নেশা :

নতুনত্বের প্রতি আগ্রহ মানবচরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য আর নতুনত্বের প্রতি অদম্য আগ্রহের কারণেই অনেকে একটু দেখিবলে মাদক গ্রহণ শুরু করে মাদক এমনই জিনিস একবার ধরলে তা আর ছাড়া যায় না।

. পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাব

 অনেক সময় মাদকদ্রব্যের সাথে প্রায় অপরিচিত একজন ব্যক্তি মাদকাসক্ত বন্ধু বা সঙ্গীদেরপ্রভাবে নিজের অজান্তে মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এছাড়া প্রেমে ব্যর্থতা , ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনে অস্থিরতা , মূল্যবোদের অভাব , হঠাৎ সঞ্চিত টাকার চাপ ব্যয়ের অপরিচ্ছন্ন পন্থাএগুলো আমাদের তরুণসমাজকে মাদকাসক্ত হওয়ারপথ সুগম করে দেয়

মাদকাসক্তির প্রকারভেদ :

বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য চালু আছে মদ , গাঁজা , ভাং , আফিম ইত্যাদির নেশা বহু প্রাচীনকালের বিজ্ঞানেরঅগ্রগতির সাথে সাথে মাদকদ্রব্যেরও যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে বর্তমানকালের মাদকদ্রব্য হিসেবে হেরোইন , মারিজুয়ানা , এলএসডি, প্যাথেড্রিন , কোকেন , হাশিশ , মরফিন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য তবে আমাদের দেশের যুবসমাজ অতি সামান্য কারণে যেসবড্রাগকে মাদকদ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করে তার মধ্যেসিডাকসিন , ইনকটিন , প্যাথেডিন , হেরোইন , ফেনসিডিল ইয়াবা প্রধান

মাদকদ্রব্যের পাচার চোরাচালান :

মাদকদ্রব্য প্রসারের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে পাচার চোরাচালান সুসংবদ্ধ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বর্তমানে সারা পৃথিবীতেমাদকদ্রব্য চোরাচালানের জাল বিস্তৃত মূলত বহু বিস্তৃত পারস্পরিক স্বার্থ সংরক্ষণকারী চক্রের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য পাচারে অর্থযোগান দেয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নেটওয়ার্ক সক্রিয় ভৌগৌলিক দিক থেকে মাদকদ্রব্য উৎপাদন পাচারের জন্য আমেরিকা , কলম্বিয়া , পানামা মেক্সিকো ছাড়াও এশিয়ার তিনটিসীমান্ত পয়েন্ট ; যেমন . গোল্ডেন ট্রায়েঙ্গেলমায়ানমার , লাওস থাইল্যান্ড সীমান্ত ; . গোল্ডেন ওয়েজ আফগানিস্তান , পাকিস্তান ইরান সীমান্ত ; . গোল্ডেন ক্রিসেন্টবাংলাদেশ , নেপাল ভারত সীমান্ত চিহ্নিত করা হয়েছে

মাদকাসক্তির ক্ষতিকর দিক :

মাদকাসক্তির কারণে মানুষের কর্মশক্তি লোপ পায় আয়ু কমে যায়।যার প্রভাব ব্যক্তিগত , পারিবারিক সামাজিক জীবনেপরিলক্ষিত হয় এবং নানা সমস্যার সৃষ্টি করে মাদকাসক্তির প্রভাবে যুবসমাজের নৈতিক অধঃপতন ঘটে নেশাগ্রস্তদের মধ্যেবাড়ে অপরাধপ্রবণতা তারা স্বাভাবিক সুখস্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনকে বিসর্জন দিচ্ছে অনেকে অকালে মৃত্যুবরণ করছে গবেষণায় দেখা গেছে , মাদকদ্রব্য গ্রহণ অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে মাদকাসক্ত ব্যক্তি নেশারখরচ যোগানোর জন্যই নানা রকম সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। মাদকদ্রব্য মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে , তার ব্যক্তিত্বনষ্ট হয় , স্বাভাবিক জীবনে বেঁচে থাকার শক্তির থাকে না।

বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার:

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর ন্যায় আমাদের দেশেও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বিশেষ করেআমাদের তরুণসমাজ আজ ভয়াবহ মাদকসক্তির শিকার বাংলাদেশে কী পরিমাণ মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা হয় এবং কত লোকমাদকাসক্ত তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই তবে এদেশে মোট জনসংখ্যার ১৭ ভাগ মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে বলেবিশেষজ্ঞদের ধারণা বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের উৎপাদন বাজারজাতকরণ সরাসরিভাবে নিষিদ্ধ হলেও ওষুধ তৈরির কাঁচামালহিসেবে কিছু কিছু মাদকদ্রব্য আমদানি করার অনুমতি রয়েছে সুযোগে চোরাকারবারি কালোবাজারি শুল্ক ফাকি দিয়েবিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আমদানি করছে এবং উচ্চমূল্যে তা তুলে দিচ্ছে তরুণতরুণীদের হাতে ফলে এদেশে প্রচুর পরিমাণেমাদকদ্রব্যের অপব্যবহার হচ্ছে আমাদের দেশের মাদকাসক্তদের অধিকাংশই যুবকযুবতী , উঠতি বয়সের তরুণতরুণী মাদকদ্রব্য চোরাচালানের যাত্রাপথে বাংলাদেশের মানচিত্র অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সমস্যা আমাদের সমাজে দিন দিন তীব্র থেকেতীব্রতর হচ্ছে।

প্রতিকার :

মাদকদ্রব্যের সর্বনাশা ব্যবহারের গতিরোধ করা একান্ত আবশ্যক সমস্যার মোকাবিলা নিম্নলিখিতভাবে করাযেতে পারে

. মাদকদ্রব্য চোরাচালান প্রতিরোধ কর্মসূচিকে আরো জোরদার করতে হবে।

. ব্যক্তিগত সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে হবে এবং বেকারত্বের অবসান ঘটানোসহ ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উজ্জ্বলধারণা দিতে হবে।

. তরুণসমাজ যাতে জীবন গঠনের আদর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয় সে জন্য অভিভাবক , শিক্ষক , সমাজসেবক রাজনীতিবিদসহ সকলকে সচেতন হতে হবে।

. মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণতির কথা সংবাদ মাধ্যম অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে প্রচার করতে হবে সর্বোপরিমাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে

উপসংহার :

মাদকাসক্তির মতো সর্বনাশা মরণ ছোবল আজ দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আজকের আগামী দিনের সুস্থ , সুন্দর সুখকর সমাজের জন্যই মাদকদ্রব্যের ব্যবহার রোধ করতৈ হবে আর এর জন্য প্রয়োজনব্যক্তিগত উদ্যোগ , সামাজিক প্রতিরোধ এবং জাতীয় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ অবশ্য ব্যাপারে জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবেনানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে , যা কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button