মহাকাশ সম্পর্কে ১৫ টি অজানা তথ্য (15 unknown information about space)

সুবিশাল এই মহাবিশ্বের খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ জুড়ে মানুষের বসবাস। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরামহাকাশ নিয়ে যুগ যুগ ধরে নানা চিন্তা ভাবনা বা গবেষণা করে আসছে । কিন্তু তারপরও মহাবিশ্বের অধিকাংশই আমাদের কাছেরহস্যে ঘেরা।
দিনের আকাশের দিকে কিংবা রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা যে মহাশূন্য দিগন্ত দেখতে পাই সেটাই মহাকাশ। মহাকাশনিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। মহাকাশ সম্পর্কে সত্যিই চমৎকার কিছু তথ্য রয়েছে যা আমরা এখনই আপনাদের সাথেশেয়ার করবো।
1. মহাকাশের ঘ্রাণ:
কখনো কি চিন্তা করেছেন মহাকাশের ঘ্রাণটা কেমন হতে পারে। মহাকাশে সেখানের পরিবশেরও একটা আলাদা ঘ্রাণ রয়েছে।নভোচারীরা জানিয়েছেন তারা যখন স্পেসে ভ্রমন করেন তখন তাদের কাছে মহাকাশের গন্ধ উত্তপ্ত ধাতু বা ওয়েল্ডিঙের কাজকরার সময় আশেপাশে থাকলে যে ঘ্রাণ পাওয়া যায়, মহাশূন্য বা স্পেসের গন্ধটা ঠিক সেরকম।
2. মহাকাশে পানির পরিমাণ:
আমরা সকলেই জানি পৃথিবীর তিন ভাগ জল এবং এক ভাগ স্থল। এই তিন ভাগ পানির পরিমাণ প্রায় 326 কুইন্টিলিয়নগ্যালন বা 1233.91 কুইন্টিলিয়ন লিটার।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মহাকাশে বিপুল পরিমান পানি রয়েছে। এই পানির পরিমাণটা জানলে আপনি হয়তোবা অবাক হবেন।পৃথিবীর সমস্ত সাগর–মহাসাগরে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তার চাইতেও ১কোটি ৪০লাখ গুন বেশি পানি মহাকাশে রয়েছে।
3. কম তাপমাত্রার নক্ষত্র:
নক্ষত্র বলতে সাধারণত অনেক উজ্জ্বল ও বড় তারাকে বুঝায়। সূর্য একটি নক্ষত্র। যার গড় ব্যাসার্ধ হল 432,450 মাইল। সূর্যেরউপরিভাগের তাপমাত্রা 5778 ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শুনতে কিছুটা অন্যরকম মনে হলেও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মহাকাশে এমন একটি নক্ষত্র রয়েছে যার উপরিভাগের তাপমাত্রামাত্র 27 ডিগ্রি সেলসিয়াস।এই নক্ষত্রটির অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় 47 আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
4. উত্তপ্ত বরফ(Burning Ice):
বিজ্ঞানীরা নতুন একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছে। এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৩ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। বিজ্ঞানীরাজানিয়েছেন এই গ্রহের পুরো পৃষ্ঠটাই নাকি Burningm Ice। অর্থাৎ, উত্তপ্ত বরফ দ্বারা আবৃত।
এই গ্রহের পৃষ্ঠে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়।এই প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে পানি কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়।আর গ্রহ পৃষ্ঠেতাপমাত্রা অনেক বেশি বলে এই জমাট বরফ থেকে বাষ্প নির্গত হয়। তাই বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন Burning Ice বা উত্তপ্তবরফ।
5. চাঁদে মানুষ যাওয়ার সম্ভাবনা:
চাঁদে মানুষ গিয়েছে কিনা এ নিয়ে অনেক জল্পনা–কল্পনা ও সন্দেহ এখনও মানুষের মধ্যে রয়েছে।কিন্তু চাঁদে যদি কোন মানুষসত্যিকারে গিয়ে থাকে তাহলে তার পায়ের ছাপ 10 কোটি বছর পরও সেখানে পাওয়া যাবে। কেননা সেখানে কোনো বায়ুমণ্ডল নেইবা বায়ুমন্ডলে জল নেই। সেখানে কোনো বৃষ্টিপাত ও হয় না।তাই সেখানে কোনো মানুষ যেয়ে থাকলেও পায়ের চাপ মুচে যাওয়ারকোনো সম্ভাবনাও নেই।
6. মাউন্ট এভারেস্টের চাইতেও বড়ো পাহাড়:
আপনাকে যদি কখনো প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় পাহাড় কোনটি? তাহলে আপনি অবশ্যই বলবেন মাউন্ট–এভারেস্ট।কিন্তু আপনি শুনলে অবাক হবেন মাউন্ট–এভারেস্টের চাইতেও বড় পাহাড় রয়েছে মঙ্গলগ্রহে। মঙ্গলগ্রহের এই পাহাড় মাউন্টএভারেস্ট এর চাইতেও কয়েক গুণ বড়।
7. আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন:
যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যায়বহুল স্থাপনা কোনটি? জানলে হয়তোবা অবাক হবেন। আন্তর্জাতিকমহাকাশ স্টেশন হচ্ছে সেই স্থাপনা যা তৈরি করার জন্য খরচ হয়েছিলো ১৫০মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মহাকাশচারীরা সেখানেঅবস্থান করেন।মহাকাশচারীরা যখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করেন তারা প্রতিদিন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখেন।
8. মৃত নক্ষত্র:
রাতের অন্ধকারে যখন আমরা পরিষ্কার আকাশের দিকে তাকাই তখন আমরা অসংখ্য নক্ষত্র দেখি, কিন্তু এই নক্ষত্রগুলোর মধ্যেঅনেকে নক্ষত্রই মৃত থাকে। মৃত নক্ষত্রগুলো আলো বিকিরণ করতে করতে, ধীরে ধীরে একসময় নিঃশেষ হয়ে যায়।
অনেকের মনে হয়তোবা প্রশ্ন জাগতে পারে যদি নক্ষত্রগুলো মৃতই হয়, তাহলে রাতের আকাশে নক্ষত্রগুলো দেখি কীভাবে আমরা?
কারণ এসব নক্ষত্রের বেশিরভাগই আমাদের পৃথিবী থেকে শতকোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে।
বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পূর্বে নক্ষত্রগুলোর আলো নিঃসৃত হয়ে গেছে। এই নিঃসৃত আলো আমরা এখন রাতের আকাশে দেখছি, এই এতদিন পর।
9. ডায়মন্ডের প্ল্যানেট:
পৃথিবীর চাইতেও দ্বিগুণ হীরা দিয়ে তৈরি একটি গ্রহ আছে। যার নাম সুপার আর্থ। এটি গ্রাফাইট এবং হীরা দ্বারা আচ্ছাদিত।
সেই গ্রহে পরিদর্শন করতে চাইলে একজন নভোচারীকে 12 মিলিয়ন ডলারের স্পেস স্যুট নিতে হবে।যা সেখানে যাওয়ার জন্যপ্রয়োজনীয়।
10. মহাকাশে পানি ফোটানো:
সচরাচর পানি ফুটানোর সময় আমরা দেখে থাকি বুদবুদ আকারের অনেকগুলো পানির ফোঁটা পাত্রের উপরের দিকে উঠেআসছে। কেউ যদি মহাকাশে যেয়ে পানি ফোটানোর চেষ্টা করে তাহলে কি একই ব্যাপার ঘটবে? উত্তর হচ্ছে না। কেউ যদিমহাকাশে যেয়ে কোনোভাবে পানি ফোটানোর চেষ্টা করে তাহলে অনেকগুলো বুদবুদের পরিবর্তে একটামাত্র দানবাকৃতির বুদবুদউঠে আসবে।
11. হারিয়ে যাওয়া মহাবিশ্ব:
এখন আমরা মহাবিশ্বের বিশালতা নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু মহাবিশ্ব তার চাইতেও বিশাল। বিজ্ঞানীদের মতে মহাবিশ্বের প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগই ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি রূপে আছে।
শুনলে হয়তোবা অবাক হবেন এই প্রসারণশীল মহাবিশ্বের মাঝে আঠার মত কাজ করছে ডার্ক ম্যাটার। বিজ্ঞানীরা ডার্ক ম্যাটারএবং ডার্ক এনার্জি নিয়ে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। তারা এর মাত্র 4 শতাংশ আবিষ্কার করতে পেরেছে।
কিন্তু এই ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জির পরিমাণ করা হয়তোবা কোনোদিনও সম্ভব হবে না। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও হালছাড়তে নারাজ।
12. সূর্যের মধ্যে পৃথিবী:
আমরা সকলেই জানি সূর্য যথেষ্ট পরিমাণ বড়। কিন্তু যদি স্কোয়াশ করা হয় সূর্যের মধ্যে প্রায় 1.3 মিলিয়ন পৃথিবী ভিতরে ফিটকরা যাবে।
13. মহাকাশে আরশোলার প্রজনন:
রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা একবার মহাকাশে আরশোলার প্রজনন ঘটিয়ে আরশোলার জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু তারা বিস্মিত হন সেখানেজন্ম নেওয়া সেই আরশোলাগুলো পৃথিবীর আরশোলাগুলোর চাইতেও কয়েকগুন বেশি শক্তিশালী ছিল।
14. যান্ত্রিক সহায়তা ছাড়া আকাশে উড়া:
আমরা অনেকেই অনেক সময় চিন্তা করি যদি কোনো প্রকার যান্ত্রিক সহায়তা ছাড়া আকাশে উড়তে পারতাম তাহলে কতোইনাভালো হতো। যদি আপনার এই ধরনের কোনো চিন্তা ভাবনা থেকে থাকে তাহলে আপনাকে শনির উপগ্রহ স্যাটানে যেতে হবে।
কেননা শনির উপগ্রহ স্যাটানের বায়ুমণ্ডলের স্তর এতোটাই ঘনত্ব যে, সেখানে আপনি দু‘হাত প্রসারিত করে শূন্যে ভেসে থাকতেপারবেন।
15. যেখানে শুরু সেখানেই শেষ:
আপনি চাইলেও কখনোই মহাবিশ্বের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে যেতে পারবে না।যদি আপনি কখনো এই মহাবিশ্বের একটা নির্দিষ্টস্থান থেকে সরলরেখা বরাবর হাঁটতে শুরু করেন, তাহলে আপনি অনন্তকাল হাঁটার পর আবার সেই শুরুর জায়গাতেই ফেরতআসবেন।
মহাবিশ্বের বিশালতার মাঝে আমাদের এই পৃথিবী খুবই ক্ষুদ্র।অথচ এই পৃথিবীর পাহাড়, সমুদ্রসহ আরো কত রহস্যই এখনো আমাদের অজানা।
আশা করা যায় কোনো একদিন পৃথিবীর সব রহস্যই সমাধান হবে। পাশাপাশি মহাবিশ্বের অসংখ্য অজানা রহস্যের জটও খুলতেআরম্ভ করবে।
মহাকাশ সম্পর্কে ভিন্নরকম কোন তথ্য আপনার জানা থাকলে তা অবশ্যই কমেন্টে আমাদের জানাবে।ধন্যবাদ।