রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড PDF Download by রবার্টটি কিয়োসাকি

বইয়ের নাম |
রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড |
লেখক |
রবার্টটি কিয়োসাকি |
প্রকাশক |
চর্চা গ্রন্থ প্রকাশ |
পেজ |
160 |
দেশ |
বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি |
আত্ম উন্নয়ন |
রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বইটি একটি আত্ম উন্নয়ন মূলক বই। মানুষের দেখার বিষয়বস্তু এক হলেও দৃষ্টিভঙ্গির ফলে সেটা কোথায়গিয়ে দাঁড়ায় তা এই বইতে প্রমাণ করেছেন লেখক। আসলে সমাজের সব মানুষই চায় ধনী হতে যেন ঋণগ্রস্ত না থাকতে হয়। কিন্তুমানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ফলে আসলে ধনী হতে গিয়ে আরো ঋণের বুঝা কাঁধে চাপিয়ে নেয়। বইটি পড়লে আপনি বুঝতে পারবেনধনী আর গরীবের দৃষ্টিভঙ্গিতে কতোটা তফাত আছে। যারা ভবিষ্যতে প্রকৃত ধনী মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চান তাহলে বইটিআপনার জন্যই। বইটি পড়লে আপনার চিন্তাভাবনায় অনেকটা পরিবর্তন আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারি।
ভূমিকা প্রয়োজনীয়তা স্কুল কি বাস্তব দুনিয়ার জন্য ছেলেমেয়েদের তৈরি করে ? আমার বাবা – মা বলতেন , “ পড়াশুনা কর , ভালো গ্রেড পাও , দেখবে তুমি অনেক বড় চাকরি পাবে । ” তাদের জীবনের লক্ষ্য ছিল আমাকে ও আমার বড় বোনকে কলেজেপাঠাননা , যাতে জীবনে সফল হওয়ার সবচেয়ে বেশি সুযোগ পাই । ১৯৭৬ এ আমি যখন ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকেএকাউটিং এ সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে অনার্স গ্রাজুয়েট হলাম , আমার বাবা – মা তাদের লক্ষ্যে পৌছে গেলেন ।
তাঁদের জীবনের চূড়ান্ত আনন্দের ছিল এই অর্জন । ‘ বিগ এইট ’ নামক এক একাউন্টিং ফার্মে আমি যোগ দিলাম এবং ক্যারিয়ারগড়লাম ও দ্রুত রিটায়ার করলাম । আমার স্বামী মাইকেল খুব সহজ পথ বেছে নিয়েছিলেন । আমরা দুজনই ভদ্র অর্থে পরিশ্রমীপরিবারের সন্তান , কিন্তু কাজের ব্যাপারে নীতিগতভাবে আমরণ সিরিয়াস , মাইকেলও অনার্স গ্রাজুয়েট ছিল , প্রথমবার সেইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ও দ্বিতীয়বার ল ’ স্কুল থেকে ডিগ্রি নিয়েছে । ওয়াশিংটন ডি.সি ল ফার্মে সে যুক্ত হয়ে গেল , ফলে তার পেশা ওভবিষ্যত ছিল ও দ্রুত রিটায়ার মেটের নিশ্চয়তাও ছিল ।
যদিও আমাদের ক্যারিয়ার সফল ছিল , কিন্তু সবকিছু আশানুরূপ হলো না , নানা কারণে আমাদের দুজনকেই পদ বদলাতেহয়েছে আর আমাদের জন্য কোন পেনসনের ব্যবস্থা ছিল না । ব্যক্তিগত অবদানই রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের পুঁজি হয়ে রইল । তিনসন্তান নিয়ে আমার ও মাইকেলের সুখী সংসার । এই লেখা যখন লিখছি , তখন আমার দুই সন্তান কলেজে ও অন্যজন হাই স্কুলেপড়ছে । বাচ্চারা যাতে সর্বোত্তম শিক্ষা পায় , সে ব্যাপারে আমরা খুব সচেতন ছিলাম । ১৯৯৬‘এর একদিন আমার এক সন্তানখুব বিরক্তি নিয়ে স্কুল থেকে ফিরল ।
সে পড়াশুনার বিষয়ে খুব ক্লান্ত ও একঘেয়ে হয়ে উঠল । সে জানতে চাইল , “ কেন আমি ঐসব বিষয় পড়ে সময় নষ্ট করছিযেগুলো আমার জীবনে কোন কাজে আসবে না ? ” কিছু না ভেবেই আমি বললাম , “ কারণ তুমি ভাল গ্রেড না পেলে কলেজেযেতে পারবে না । ” সে জবাব দিল , “ কলেজে না গেলেও আমি ধনী হতে পারব । ” কিছুটা ভয়ার্ত স্বরে আমি বললাম , “ কলেজে না গেলে তুমি ভালো চাকরি পাবে না । আর চাকরি না পেলে তুমি কি করে ধনী হবে ? ” আমার ছেলে আত্মপ্রসাদেরহাসি দিল আর মৃদু বিরক্তির সাথে তার মাথা নাড়তে লাগল । এ ধরনের কথা আমাদের মধ্যে আগেও হয়েছে । সে তার মাথানীচু করল ও চোখ পাকালো । আমার কথাগুলো আবারও অর্থহীন প্রমাণিত হল । স্মার্ট ও জেদী হওয়া সত্ত্বেও আমার ছেলে ভদ্রও মার্জিত । সে বলতে শুরু করল , “ মা … এখন আমার পালা তার বক্তব্য শোনার । “ সময়ের দিকে তাকাও । চারপাশে দেখ ।ধনী লোকেরা পড়াশুনার জন্য ধনী হয়নি । মাইকেল জর্ডান ও ম্যাডোনাকে দেখ । এমনকি বিল গেটস্ , যিনি , হাভার্ড ছেড়েগিয়েছিলেন ,মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা ।
তিনি আমেরিকার সবচেয়ে ধনী মানুষ আর তার বয়স মাত্র ৩০ বছর । মানসিকভাবে তৈরি থাকলে বছরে ৪ মিলিয়ন ডলারেরওবেশি আয় করা যায় । আমাদের মধ্যে দীর্ঘ নীরবতা নেমে আসল । এটা আমারও ভুল ছিল যে বাবা – মা আমাকে যা – ইবলেছেন , সেটাই আমি আমার সন্তানকে বলছি । চারপাশের পৃথিবী বদলে গেছে , কিন্তু উপদেশ বদলায়নি । ভালো শিক্ষা ওভালো গ্রেড সাফল্যের নিশ্চয়তা দেয় না আর আমাদের সন্তানেরা ছাড়া অন্য কেউ তা খেয়াল করেছে বলে মনে হয় না । সেবলতে লাগল , “ মা , তোমার আর বাবার মত কঠোর পরিশ্রম আমি করতে চাই । । তোমরা অনেক আয় করেছ আর আমরাবেশ বড় একটি ঘরে থাকি , যেখানে প্রচুর খেলনা আছে । তোমার কথা শুনলে আমি তোমাদের মতই হব আর শুধু ট্যাক্স দেয়ারজন্য প্রচুর আয় করব । এখন চাকরির কোন নিশ্চয়তা নেই , যখন তখন ছাঁটাই হয় । আমি এটাও জানি সে কলেজ গ্রাজুয়েটরাতোমাদের চেয়ে অনেক কম আয় করে ।
ডাক্তারদের দেখ ! আগে তারা যেরকম আয় করত , এখন তারা তা করতে পারে না । আমি জানি রিটায়ারম্যান্টের পর সামাজিকনিরাপত্তা বা কোম্পানীর পেনসনের উপর আমি নির্ভর করতে পারি না । আমার নতুন জবাব চাই । ” সে ঠিক বলেছিল , তারনতুন জবাব চাই আর আমারও । আমার বাবা – মায়ের উপদেশ ১৯৪৫’এর আগে হয়ত ঠিক ছিল , কিন্তু দ্রুত পরিবর্তনশীলবিশ্বের মানুষের জন্য তা মারাত্মক ক্ষতিকর । আমি সহজে আমার বাচ্চাকে বলতে পারি না , “ স্কুলে যাও , ভাল গ্রেড পাও আরনিরাপদ , নিশ্চিত চাকরি খোঁজ । ” আমি বুঝলাম যে বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য আমাকে নতুন পথ খুঁজে নিতে হবে । একজনমা ও একাউটেন্ড হিসেবে স্কুলে অর্থনৈতিক শিক্ষার ঘাটতি সম্পর্কে আমি জানতাম । হাইস্কুল পড়ুয়া অনেক বাচ্চাদের কাছেইআজকাল ক্রেডিট কার্ড থাকে , যদিও তারা জানে না এটি কিভাবে বিনিয়োগ করতে হয় , কার্ডের ইন্টারেস্টের জটিল হিসাবততাবাদই দেন । কোন ধরনের অর্থনৈতিক জ্ঞান ও টাকার কার্যকারিতা জানা ছাড়াই তারা কার্ড ব্যবহার করে । কোন প্রস্তুতি ছাড়াইতারা এমন বাস্তবতার মুখখামুখি হয় , যেখানে সঞ্চয়ের চেয়ে ব্যয়ের উপর বেশি জোর প্রদান করা হয় । যখন আমার বড় ছেলেক্রেডিট কার্ডে ঋণের বোঝা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ল , আমি তাকে কেবল কার্ড নষ্ট করতে সাহায্য করলাম না , বরঞ্চ অর্থনৈতিকবিষয়ে সন্তানদের শিক্ষা দেয়ার জন্য জরুরী একটি প্রোগ্রাম খুঁজতে লাগলাম ।
গত বছরের একদিন আমার স্বামী অফিস থেকে আমাকে ফোন করল । সে বলল , “ এখানে এমন একজন আছেন যার সাথেতুমি দেখা করতে পার । তাঁর নাম রবার্ট কিয়োসাকি । তিনি একজন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী । তিনি শিক্ষাসংক্রান্ত পণ্যেরব্যাপারে সনদপ্রাপ্ত ব্যক্তি । আমার মনে হয় তুমি উনাকেই খুঁজছ ।
আমি যা খুঁজছিলাম রবার্ট কিয়োসাফির নতুন পণ্য ‘ ক্যাশফ্লো ’ দেখে মাইক ভীষণ মুগ্ধ হয়ে গেল । মিষ্টার রবার্ট আমাদেরদুজনের জন্যই একটি টেষ্টের ব্যবস্থা করেছিলেন । যেহেতু এটি চেয়ে বেশি কিছু দেয়া এবং পেনশনের উপর নির্ভর না করারউপদেশ দেয়াই হল উৎসাহিত করা । আর এও সত্য যে ট্যাক্স হল মানুষের সবচেয়ে বড় খরচ ।
মূলত : অনেক মানুষ জানুয়ারী থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত কেবল সরকারী ট্র্যাক্স যোগাড়ের জন্য কাজ করে । তাই নতুনধারণা খুব জরুরী আর এ বইয়ে তা আছে । রবার্টের মতে ধনীরা তাদের সন্তানদের ভিন্নভাবে শিক্ষা দেয় । তারা বাসার ডিনারটেবিলে বসে শেখায় । এই ধারণাগুলো বাচ্চাদেরকে দেয়ার জন্য আপনি হয়ত পছন্দ করতেন না , কিন্তু ফিরে তাকিয়েছেন বলেধন্যবাদ জানাই । আর আমার মতে সবসময় খুঁজতে থাকবেন । একজন মা ও সিপিএ হিসেবে আমার মনে হয় ভালো গ্রেডপাওয়া ও ভাল চাকরি পাওয়ার পরামর্শ এখন পুরনো হয়ে গেছে । আমাদের সন্তানদেরকে আরো আধুনিক কিছু উপদেশ দেয়াউচিত । নতুন ধারণা ও ভিন্ন শিক্ষার প্রয়োজন । কর্মী হিসেবে চেষ্টা করতে বলার পাশাপাশি নিজস্ব কর্পোরেশন তৈরির পরামর্শওমন্দ নয় ।
মা হিসেবে আমি আশা করি যে এই বই অন্যান্য বাবা – মাকে সাহায্য করবে । রবার্টের আশা হল মানুষকে জানানো যে ইচ্ছেকরলেই মানুষ সম্পদ অর্জন করতে পারে । আজ আপনি যদি মালী বা দারোয়ান কিংবা বেকারও হন , নিজেকে শিক্ষিত করারযোগ্যতা আপনার আছে এবং আপনি পছন্দের মানুষগুলোকে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপারে শিক্ষা দান করতে পারেন । মনেরাখবেন যে অর্থসংক্রান্ত বুদ্ধিমত্তা হল সেই মানসিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে পারেন ।বর্তমানে আমরা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মোকাবেলা করছি । কারো কাছেইযাদুর বল নেই , কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত যে বাস্তবতার মধ্যেই পরিবর্তন নিহিত রয়েছে । ভবিষ্যতের কথা কে বলতে পারে ? কিন্তু যা – ই ঘটুকনা কেন , আমাদের দুটো মৌলিক পছন্দ রয়েছে । তৈরি হয়ে , শিক্ষিত হয়ে এবং নিজের ও সন্তানদের আর্থিকমেধাকে জাগ্রত করে হয় নিরাপদে খেলা নয়তো বা স্মার্টলি খেলা ।
–শ্যারন লেচটার
প্রথম অধ্যায়
ধনী পিতা , দরিদ্র পিতা রবার্ট কিয়োসাকির বিবরণ অনুযায়ী আমার দু’জন পিতা ছিল– একজন ধনী । অন্যজন দরিদ্র একজনউচ্চশিক্ষিত ও বুদ্ধিমান ছিলেন । তিনি পি.এইচ.ডি করেছিলেন এবং দুই বছরেরও কম সময়ে চার বছরের আন্ডারগ্রাজুয়েটকাজগুলো শেষ করেছিলেন । তিনি পূর্ণ স্কলারশীপ নিয়ে শিকাগোর স্টানফর্ড ইউনিভার্সিটি ও নরথওয়েষ্টার্ণ ইউনিভার্সিটিতেপড়াশুনা করতে গিয়েছিলেন । আর অন্য পিতা অষ্টম গ্রেড শেষ করতে পারেননি । দু‘জনই তাদের পেশায় সফল ছিলেন । প্রচুরকাজ করেছেন জীবনভর । দুজনেই প্রচুর আয় করেছেন ।
তবু একজনকে সারাজীবন লড়াই করতে হয়েছে । অর্থনৈতিকভাবে । অন্যজন হাওয়াই ’ এর অন্যতম ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন। একজন তার পরিবার ও চার্চের জন্য দশ মিলিয়ন ডলার রেখে মারা গেছেন । অন্যজন কিছু বিল বাকী রেখে মারা গেছেন ।দুজনই শক্তিশালী , আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন ও প্রভাবশালী ছিলেন । দুজনেই আমাকে উপদেশ দিয়েছেন , তবে সেগুলো একইছিল না । দুজনেরই শিক্ষার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল , তবে তাদের বিষয় নির্বাচন ছিল ভিন্ন । যদি আমার একজন পিতা থাকত, তবে হয় আমি তাঁর উপদেশ মেনে নিতাম বা বাদ দিতাম । কিন্তু দুজন পিতা বিপরীতমুখী উপদেশ দিয়েছিলেন আমাকে , একজন ধনী , অন্যজন গরীব । কেবল গ্রহণ বা বর্জন করার পরিবর্তে আমি অনেক ভাবলাম , তুলনা করলাম ও তারপর নিজেরজন্য বাছাই করলাম ।
সমস্যা ছিল যে ধনী পিতা তখনও ধনী হননি ও দরিদ্র পিতা তখনও দরিদ্র হননি , তারা দুজনেই পেশাগত জীবন আরম্ভকরেছিলেন এবং অর্থ ও পরিবার নিয়ে লড়াই করছিলেন । কিন্তু অর্থের ব্যাপারে তাদের দু‘জনের যুক্তি ছিল ভিন্ন । উদাহরণস্বরূপ, একজন বলেছিলেন , “ অর্থের মোহ সব দুষ্কর্মের মূল ” । অন্যজন বলেছিলেন , “ টাকার অভাব সব দুষ্কর্মের মূল । ” দুই পিতারপ্রভাব আমার জন্য বেশ কষ্টকর ছিল । আমি সুপুত্র হতে চেয়েছিলাম , শুনেছিলাম তাদের কথা , কিন্তু তারা একই রকম বলেননি। অর্থসংক্রান্ত বিষয়ে তাদের যুক্তি এত বিপরীতমুখী ছিল যে আমি রীতিমতো কৌতুহলী হয়ে উঠলাম । দীর্ঘসময় ধরে আমিতাদের বক্তব্য নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম । একান্ত ব্যক্তিগত সময়ে আমি নিজেকে প্রশ্ন করতাম “ তিনি কেন একথা বলেছেন ? ” আবার একই প্রশ্ন অন্য পিতার ব্যাপারেও ভাবতাম । বরঞ্চ এমন করে ভাবতে পারলে আমার জন্য সহজ হতো, “ হ্যা , তিনি ঠিকবলেছেন । আমি মেনে নিলাম । ” অথবা খুব সহজে এড়িয়ে যেতে পারতাম এমনটি ভেবে , “ এ বৃদ্ধ লোকটি জানেইনা নিজে কিবলছে । ” বরং দু‘জন বাবা যাদের আমি ভালোবাসি , আমাকে ভাবতে বাধ্য করলেন এবং নিজের পথ নিজেকে বেছে নিতে হল ।এজন্যই নেহায়েত গ্রহণ বা বর্জনের চেয়ে পথ বেছে নেয়ার কাজটা আমার জন্য বেশ মূল্যবান হয়ে উঠেছিল । ধনীরা ধনী হওয়ার, গরীবেরা গরীব থাকার ও মধ্যবিত্তরা ঋণে জর্জরিত থাকার অন্যতম কারণ হল অর্থের বিষয়টি বাসায় শেখানো হয় , স্কুলে নয়।
পিতামাতার কাছ থেকে আমরা বেশিরভাগ এ বিষয়ে শিখি । কাজেই একজন দরিদ্র পিতা অর্থের ব্যাপারে সন্তানকে কি বলতেপারে ? তারা কেবল বলে , “ স্কুলে যাও , কঠোর পরিশ্রম কর । ” সন্তান হয়ত কৃতিত্বের সাথে গ্রাজুয়েট হয় , কিন্তু দরিদ্র ব্যক্তিরঅর্থনৈতিক কর্মসূচী ও মানসিকতা তার মধ্যে থেকে যায় । খুব কম বয়সে এটি শেখানো হয় । স্কুলে অর্থ সম্পর্কে শেখানো হয় না। স্কুল শিক্ষা সংক্রান্ত ও পেশাগত দক্ষতার প্রতি নজর দেয় , কিন্তু অর্থনৈতিক নয় । এজন্য স্কুলে ভালো গ্রেড পাওয়া সত্ত্বেও স্মার্টব্যাংকার , ডাক্তার ও অ্যাকাউন্টেন্টরা সারাজীবন কষ্ট পায় । অর্থসংক্রান্ত কোনরকম ট্রেনিং ছাড়াই উচ্চশিক্ষিত রাজনীতিবিদ ওসরকারী কর্মকর্তারা জাতীয় অর্থনীতির সিদ্ধান্ত নেয় বলে আমাদের ঋণ ফুরোয় না । অনেক সময় আমি নতুন যুগের দিকেতাকাই ও অবাক হয়ে ভাবি যখন লক্ষ লক্ষ মানুষের অর্থনৈতিক ও চিকিৎসা সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বে , তখন কি হবে ? তারা আর্থিক সাহায্যের জন্য পরিবার বা সরকারের উপর নির্ভরশীল হবে । যখন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ও সামাজিক নিরাপত্তা ফুরিয়েযাবে , তখন কি হবে ? জাতি কিভাবে টিকে থাকবে যদি সন্তানদের অর্থনৈতিক শিক্ষা পিতা – মাতার উপর ছেড়ে দেয়া হয় , যাদেরবেশিরভাগই দরিদ্র ? দু’জন প্রভাবশালী বাবা থাকার কারণে আমি শিখতে পেরেছি ।
তাদের উপদেশের ব্যাপারে ভাবতে গিয়ে আমি মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছি এবং এগুলোর প্রতিক্রিয়া জেনেছি । যেমন , একজন পিতা বলতে অভ্যস্থ যে “ আমি ব্যয় বহন করতে পারবে । ” অন্যজন এসমস্ত শব্দগুলো ব্যবহার করতেই নিষেধ করেছেন। তিনি একথা বলতে জোর দিয়েছেন , “ আমি কিভাবে এই ব্যয় বহন করতে পারি ? ” একটি হল বিবৃতি ও অন্যটি প্রশ্ন । একটিআপনাকে পিছিয়ে দিচ্ছে ও অন্যটি চিন্তা করার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে । আমার ধনী হতে থাকা পিতা ব্যাখ্যা করেছেন যে সরাসরি “ আমি ব্যয় বহন করতে পারবো না ” বললে ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দেয় । “ আমি কিভাবে ব্যয় করতে পারি ” – এই প্রশ্নেরমাধ্যমে ব্রেনকে কাজ দেয়া হয় । তিনি এটি বুঝাননি যে যা মন চায় , তার সব কিনে ফেলুন । পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালীকম্পিউটার যে মন , তার চর্চার উপর জোর দিয়েছেন । প্রতিদিন অনুশীলন করি বলেই আমার ব্রেন শক্তিশালী হয়ে উঠছে