রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন / রচনা
ভূমিকা :
বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া তথা পুরো বিশ্বে আলোচিত একটি সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা । শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলছে ।অন্তহীন এই সমস্যা । রোহিঙ্গা জাতি বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মায়ানমারের ( বার্মার ) উগ্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ওরাষ্ট্রীয় সামরিক – আধাসামরিক বিভিন্ন বাহিনীর অব্যাহত নির্যাতনের শিকার হয়ে বারবার তাদের ছুটতে হচ্ছে আশ্রয়ের সন্ধানে ।একেবারেই পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তাদের প্রধান গন্তব্য । এতে বাংলাদেশও পড়ছে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় ।
রোহিঙ্গা কারা ?
কথিত আছে , বার্মার ( বর্তমানে মায়ানমার ) চন্দ্র বংশীয় রাজা মহত ইং চন্দ্রের রাজত্বকালে ( ৭৮৮–৮১০ খ্রি . ) কয়েকটি বাণিজ্যবহর রামন্ত্রী দ্বীপের তীরে এক সংঘর্ষে ভেঙে পড়ে । জাহাজের আরবীয় আরোহীরা তীরে এসে ভিড়ার পর রাজা । তাদেরউন্নততর আচরণে সম্ভষ্ট হয়ে আরাকানে বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করেন । আরবীয় মুসলমানগণ স্থানীয় রমণীদের বিয়ে করেনএবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন । জনশ্রুতি আছে , আরবীয় মুসলমানেরা ভাসতে ভাসতে কূলে ভিড়ার পর ‘ রহম ‘ , ‘ রহম ‘ ধ্বনি দিয়ে স্থানীয় জনগণের সাহায্য কামনা করতে থাকে । বলাবাহুল্য , আরবিতে ‘ রহম ‘ শব্দের অর্থ দয়া করা । কিন্তু জনগণমনে করে এরা রহম জাতীয় লোক । রহম শব্দই বিকৃত হয়ে “ রোয়াং ‘ এবং কালক্রমে ‘ রোহিঙ্গা ‘ হয়েছে বলে রোহিঙ্গারা মনে করেথাকেন ।
রোহিঙ্গা সমস্যা :
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস থেকে জানা যায় যে , তারা বিশেষ করে আরবীয় জনগোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত । ফলে বর্মী জনগোষ্ঠীরসাথে তাদের জাতিগত বিভেদের রেখা একটা সময় প্রকট হয়ে দেখা দেয় । এর জন্য সামাজিক , অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক ওধর্মীয় নানাবিধ কারণ দায়ী । ফলে বিভিন্ন সময়ে তুচ্ছ অজুহাতে রোহিঙ্গাদের ওপর নেমে এসেছে অত্যাচার – নির্যাতনের খড়গ ।ক্রমাগতভাবে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে চলছে ধ্বংসযজ্ঞ , হত্যা , লুণ্ঠন , অগ্নিসংযোগ , জেলেপুরে অকথ্য নির্যাতন। রোহিঙ্গারা যখনই চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে আশ্রয়ের আশায় তারা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ দিয়েচট্টগ্রাম অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে । বাংলাদেশের লোকেরাও নানাবিধ কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে । তবে ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাসমস্যা বাংলাদেশের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রয়ের জন্য এসেছে আবারআন্তর্জাতিক চাপে মায়ানমার কর্তৃপক্ষ অনেককে ফিরিয়েও নিয়েছে । তবে তারপরও বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গারাথেকেই যাচ্ছে ।
সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতি :
২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে এসে রোহিঙ্গা সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে । হত্যা , ধর্ষণ , লুটতরাজ , অগ্নিসংযোগ এমনকোনো অত্যাচার নেই যা রোহিঙ্গাদের সাথে হচ্ছে না । ফলে তারা জীবন বাঁচাতে দলে দলে এসে ভিড় জমাচ্ছে বাংলাদেশে ।আসার পথেও অনেককে জীবন দিতে হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে । এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে , যা সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে । তবে বহুবছরের আন্দোলনের পর নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রের পথে যাত্রাশুরু করার পরও মায়ানমারের সরকার এ ব্যাপারে চরম উদাসীনতা দেখিয়েছে । বিশেষ করে দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলন – সংগ্রামের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচির দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাঁর সরকার ও তার ব্যক্তিগতআচরণ বিশ্বব্যাপী ঘৃণা ও ধিক্কার কুড়িয়েছে । দাবি উঠেছে তার নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ারও । ২০১৭ সালেই সাতলক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে এসেছে । এর আগে এসে ফিরে না যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যাও পাঁচ লক্ষাধিক ।জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় সকল প্রান্ত থেকে মায়ানমার কর্তৃপক্ষকে এর সুরাহা করতে চাপ প্রয়োগ করা হলেও তারা খুব একটাসাড়া দেয়নি ।২০২১ সালের আজকের এদিনে এসেও আমরা দেখছি রোহিঙ্গাদের এখনো কোনো পরিবর্তন হয় নি।এমতাবস্থায়বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ কতদিন এই শরণার্থীর চাপ বয়ে বেড়াতে পারবে সেটা ভবিষ্যতই বলতে পারে ।
উপসংহার :
রোহিঙ্গা সমস্যা আজ শুধু রোহিঙ্গাদের নয় ; বরং সারাবিশ্বের সমস্যা । বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ ছাড়া এসমস্যার সমাধান সম্ভব নয় । এ সমস্যাকে চরম মানবিক বিপর্যয় হিসেবে বিবেচনা করে এর সমাধানকল্পে অতিসত্বর সকলেরএগিয়ে আসা উচিত।