শিক্ষা বিস্তারে কম্পিউটার / কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনা
ভূমিকা :
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার । সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে শিক্ষার মানও উন্নত হয়েছে । প্রযুক্তিগত শিক্ষায় এসেছেব্যাপক পরিবর্তন । নতুন নতুন আবিষ্কার পৃথিবীকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে । জীবনে সুখ – স্বাক্সলবিধানকল্পে মানুষ একসময় বিজ্ঞানচর্চা শুরু করেছিল । বিজ্ঞানের হাত ধরে মানুষ সেদিন পেয়েছিল জীবনের নিরাপত্তারপ্রতিশ্রুতি , পেয়েছিল জীবনের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের আশ্বাস । আধুনিক বিজ্ঞানের উচ্চ প্রযুক্তি সম্বলিত যে আবিষ্কারটি পৃথিবীতেঅতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে একুশ শতককে সবচেয়ে গতিশীল করেছে , উন্মোচন করেছে অনন্ত সম্ভাবনার দ্বাৰু বিস্ময়কর সেআবিষ্কারটি হলো কম্পিউটার । মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আশীর্বাদস্বরূপ কাজ করছে কম্পিউটার । আজকের দিনের মানুষহয়ে পড়েছে কম্পিউটার নির্ভর । বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য।
কম্পিউটার ব্যবহারের ব্যাপকতা :
কম্পিউটার আবিষ্কার খুব বেশি দিনের না হলেও এর রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার । কম্পিউটার মানুষের জীবন ও সভ্যতার সর্বত্রআলোড়ন সৃষ্টি করেছে । বিজ্ঞানের অজস্র আবিষ্কারের সাথে কম্পিউটার সম্পৃক্ত থেকে এর ব্যবহারের ব্যাপকতা সম্পর্কেমানুষকে তাক লাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে । আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার নির্ভরযোগ্য বাহন কম্পিউটার ক্ষুদ্রতম গৃহকোণ থেকে শুরুকরে সুবিশাল অফিস কক্ষ পর্যন্ত নিজের কর্মতৎপরতা ছড়িয়ে রেখেছে । দৈনন্দিন জীবনে বিচিত্র কাজকর্মের সঙ্গে যেমন এটাজড়িত , তেমনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণে , সর্বাধুনিক জ্ঞানচর্চায় , বিনোদনমূলক কর্মসূচিতে , অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে — এককথায় জীবনের সকল কাজে কম্পিউটার এত বেশি অপরিহার্য যে , একে ছাড়া বর্তমান জীবন কল্পনাও করা যায় না । কম্পিউটারশিক্ষার মাধ্যমে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা প্রয়োগের ব্যবস্থা করা যায় । এ শিক্ষা প্রতিটি সচেতন মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার :
আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির অনন্য বাহন হলো কম্পিউটার । আজকের উন্নত বিশ্বে কম্পিউটারের ব্যবহার ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা কল্পনাকরা যায় না । এর মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা এবং জ্ঞান – বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করা সহজ হয়েপড়েছে । প্রকাশনা শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে কম্পিউটার । যার ফলে শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার অন্যতম উপকরণ বই সঠিক সময়েআমাদের হাতে পৌছে যাচ্ছে । বইয়ের বিষয়াবলি এখন কম্পিউটারের ডিস্কে জমা রাখা যাচ্ছে । কী – বোর্ডের বোতাম টিপলেইএখন বিশ্বের সমস্ত জ্ঞান – ভাণ্ডার আমাদের সামনে মনিটরের পর্দায় ভেসে উঠছে । কম্পিউটারের আশীর্বাদে যেকোনো বিষয়এখন হাতের কাছে অবস্থান করে মানুষের জ্ঞান – ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করছে । এটি যেমন গ্রন্থাগারের ভূমিকা পালন করছে , তেমনিঅভিজ্ঞ শিক্ষকের । ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের যেকোনো শিক্ষণীয় বিষয়কে চোখের সামনে পাচ্ছি । পৃথিবীর সমস্তগ্রন্থাগারগুলো যেন এখন আমাদের ঘরে অবস্থান করছে ।
শিক্ষার মানোন্নয়নে কম্পিউটার :
শিক্ষার মানোন্নয়নে কম্পিউটারের ভূমিকা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । পূর্বের গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতির বদলে এখনবিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়েছে কম্পিউটারের বদৌলতে । শিক্ষার্থীরা পূর্বে যে বিষয়টি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অধ্যয়নকরত , বর্তমানে কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যবহারিক জ্ঞান প্রয়োগর ফলে সে বিষয়টি অতি অল্প সময়ে আয়ত্ত করা সম্ভব হচ্ছে ।বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন শাখা ; যেমন– চিকিৎসা , প্রকৌশল , রসায়ন , পদার্থ , গণিত , দর্শন ইত্যাদির মানোন্নয়নেকম্পিউটার বিশেষ ভূমিকা রাখছে ।
বাংলাদেশের শিক্ষায় কম্পিউটার ব্যবহার :
বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে শিক্ষার সর্বস্তরে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হলেও বাংলাদেশে তা এখনো ব্যাপকভাবে সম্ভব হয়নি ।আমাদের দেশে কেবল উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে । প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটারের ব্যবহার নেইবললেই চলে । মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের জন্যে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ‘ – এর পাঠ্যসূচিতে কম্পিউটার বিষয়টি অন্তর্ভুক্তথাকলেও তা একেবারেই প্রাথমিক ধারণা বিষয়ে সীমাবদ্ধ , তাও আবার যোগ্য শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবেশিক্ষালাভ করতে পারছে না । তার পরেও এটা যে একটা মহৎ উদ্যোগ তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার :
আশির দশকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে কম্পিউটারের ব্যবহার হলেও আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কম্পিউটার শিক্ষা শুরুহয় নব্বই – এর দশকে । বর্তমানে বাংলাদেশে কম্পিউটার শিক্ষা দ্রুত ও ব্যাপক হারে বিকাশ ঘটছে । কিন্তু কম্পিউটার শিক্ষাঅত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় শিক্ষার্থীর পরিমাণ এখনো খুবই সীমিত । বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলোবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কম্পিউটার ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার শিক্ষা দেয়া হয় । এখান থেকে যারা শিক্ষালাভ করেছেতাদের অনেকেই আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে । বর্তমানে সিলেটে অবস্থিত শাহজালাল বিজ্ঞান ওপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে কম্পিউটার শিক্ষা শুরু হয়েছে । তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো এই যে , আমাদের দেশেরবিজ্ঞান ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে আরও উন্নত শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়ে আর দেশেফিরে আসছে না । এর ফলে আমাদের দেশের কম্পিউটার শিক্ষার ওপর যথেষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে ।
কম্পিউটার শিক্ষাব্যবস্থা :
কম্পিউটারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে এতে বিপুল সংখ্যক জনশক্তি নিয়োজিত করা দরকার । আর এই প্রয়োজনমিটানোর জন্য কম্পিউটার শিক্ষাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে । বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।আমাদের দেশেও শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে কম্পিউটার শিক্ষা চালু করা হয়েছে । এখন মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটারশিক্ষার বাধ্যতামূলক পাঠ্যসূচি চালু করা হয়েছে । উচ্চতর পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারের উপর ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে ।এছাড়া বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রে কম্পিউটার শিক্ষা চালু করা হয়েছে । কম্পিউটার শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারবিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । ইতোমধ্যে ফেনীতে একটি কম্পিউটার ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে । শিক্ষার্থীদের মধ্যেওকম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে ।
উপসংহার :
মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে যেখানে কম্পিউটারের ব্যবহার অত্যাবশ্যক , সেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের কথা বলারঅপেক্ষা রাখে না । কম্পিউটারের অবদানে জ্ঞান – বিজ্ঞানের যেমন বিকাশ ঘটছে , তেমনি গতিশীলতা এসেছে জীবনের প্রবাহে ।কম্পিউটার প্রায় প্রত্যেক শিক্ষিত মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে । তাই কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা এবং এরওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করে জাতিকে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক।