শিষ্টাচার অথবা সৌজন্যবোধ অথবা আদব কায়দা (রচনা)
ভূমিকা:
শিষ্টাচার শব্দটির আভিধানিক অর্থ শিষ্ট, ভদ্র বা মার্জিত আচরণ বা ভাব। অর্থাৎ মানুষ তার কথাবার্তায়, চাল–চলনে, আচার–
আচরণে, ভদ্রতায়, সৌজন্য ও শালীনতার যে পরিচয় দিয়ে থাকে, তাই শিষ্টাচার বা আদব কায়দা। এসব গুণ যার মধ্যে রয়েছেসেই
শিষ্টাচারী। শিষ্টাচার মানব চরিত্রের সবচেয়ে বড় গুণ। যথার্থ শিষ্টাচার ছাড়া কোনো মানুষ সার্বিকভাবে সফলতা অর্জন করতেপারে।শিষ্টাচার মানব চরিত্রকে মহৎ, উন্নত ও সুন্দর করে। তাইতো শেখ সাদী বলেছেন–
‘বিনয় উন্নতির পথে প্রধান সোপান
বিনয়ে মানব হয় মহামহীয়ান।
মধুর ভাষায় কাজ, হইবে সফল,
তিক্তভাষী পাবে মনে বেদনা কেবল।
শিষ্টাচারের গুরুত্ব :
মানুষের জীবনে বিভিন্ন সময়ে তাকে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। নিজ প্রয়োজনে একে অন্যের কাছে যেতে হয়। এঅবস্থায় যদি পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া যায় বা ভালোবাসার প্রকাশ ঘটানো যায় তাই হলো শিষ্টাচার। নিজের
হৃদয় মন প্রীতিময় ও বিনয়ী হলে অপরের মনকে জয় করা সহজ হয়। মানুষের শিক্ষা–দীক্ষা, রুচি–আভিজাত্য ইত্যাদি শিষ্টাচারের
মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অপরদিকে রূঢ়তা মানুষের অশিষ্টতাকে প্রকাশ করে। পৃথিবীর যে কোনো মহামানবের চরিত্র বিশ্লেষণকরলে দেখা যায় যে, তাদের উন্নতির মূলে ছিল এই শিষ্টাচার। শিষ্টাচারী মানুষ পৃথিবীর সব মানুষকে জয় করতে পারে। কারণতার মন থাকে সর্বদা মানব কল্যাণে নিয়োজিত। তাই আপন স্বার্থের জন্যও শিষ্টাচারের বিকল্প নেই। এটি মানুষের সুখ–সমৃদ্ধি ওশান্তিকে সহজলভ্য করে তুলতে পারে। এই গুণটি থাকলে কোনো কিছু পেতে তাকে পয়সা খরচ করতে হয় না। ইংরেজিতে একটিপ্রবাদ আছে,
“Courtesy cosis nothing but buys everything.”
প্রকৃত প্রস্তাবে জীবনের সব জায়গায়ই শিষ্টাচারের জরুরি প্রয়োজন। এটি শুধু ব্যক্তি স্বার্থের নয়, জাতীয় স্বার্থেও এর ভূমিকাআছে। পৃথিবীর সমস্ত উন্নত জাতির মধ্যেই শিষ্টাচারিতা পরিলক্ষিত হয় মানুষের জন্য।
যতগুলো ধর্মগ্রন্থ আছে তার সবগুলোতেই শিষ্টচারিতার বিষয়ে বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে। পথে–ঘাটে, অফিস–আদালতে সর্বত্রই
আমাদেরকে শিষ্টাচারী হতে হবে।
শিষ্টাচার লাভের উপায় :
শিষ্টাচার বা আদব–কায়দা শিক্ষার জন্য কোনো অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না। অথচ এ কথা সত্য যে, মানুষ
ইচ্ছে করলেই শিষ্টাচারী হতে পারে না। শিষ্টাচারী হওয়ার জন্য মানুষকে সাধনা করতে হয়। শিশুকাল থেকেই একজন মানব– সন্তানকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে হয়। উর্বর ভূমি যেমন উপযুক্ত কর্ষণের অপেক্ষা রাখে, মহৎ গুণের অধিকারী সন্তানকেও তেমনি
ছোটবেলা থেকে তিলে তিলে গড়ে তুলতে হয়।
শিষ্টাচার লাভে পরিবেশের প্রভাব:
শিষ্টাচার লাভ করার ব্যাপারে পারিপার্শ্বিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি শিশু যে পরিবেশে জন্মায় এবং লালিতপালিত হয় তা তার মনে বহুল পরিমাণে দাগ কাটে। পরবর্তীকালে তার কাজে–কর্মে, আচার–আচরণে এ পরিবেশের শিক্ষা–দীক্ষাএবং রীতি–নীতি তার চরিত্রে ফুটে উঠে।মানুষের যথার্থ পরিচয় মেলে তার শিষ্টাচারে। শিষ্টাচারকে সুষ্ঠুভাবে আয়ত্ত করতে পারলেজীবনে সোনা ফলানো যায়। এতে শত্রুও মিত্র হয়।
মানুষকে বিনয়ী করে শিষ্টাচার। শিষ্টাচার হচ্ছে সর্বোচ্চ অলংকার যা একটা মানুষকে তার যথাযোগ্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করতেপারে।
শিষ্টাচার সম্বন্ধে ভুল ধারণা :
শিষ্টাচারকে অনেকে দুর্বলতা ভাবে। এরা মনে করে এটা এক ধরনের তোষামোদ স্বরূপ। আসলে তাদের এ ধারণা ভুল ওঅযৌক্তিক। এ ধারণা পোষণ করে তারা শুধু নিজেদেরই ক্ষতি করছে না, সমাজেরও ক্ষতি সাধন করছে।কারণ শিষ্টাচারহীনমানুষ সমাজের শত্রু। তাদের দ্বারা সমাজের কোনো কল্যাণ বা উপকার হয় না। তারা নীচ ও হীন মনা হয়। হীনমনাদের দিয়েআর যাই হোক সমাজের কোনো কল্যাণ আশা করা যায় না। শিষ্টতা আন্তরিক গুণ। কেউ কেউ শিষ্টতাকে আর দ্রতাকে আলাদাকরে দেখতে চান। আসলে এ দুটি একই জিনিস। কারণ কারো প্রতি ভালো আচরণ করাই শিষ্টাচার। শিষ্টাচার মানুষকে শিষ্ট ওসুজন হতে শিক্ষা দেয়। সুতরাং শিষ্টাচার হলো একটি মহৎ গুণ।
উপসংহার :
শিষ্টাচারে মানব জীবনের সাফল্য নিহিত। ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ নিহিত আছে শিষ্টাচারে। তাই মানুষকে প্রকৃত সত্যাচরণে,
শিক্ষায়, ছাত্রজীবনে, কর্মজীবনে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে শিষ্টাচারী হতে হবে। আমাদেরকে শিষ্টাচারী হতে হবে স্কুল–কলেজে, সভা–সমিতিতে, অফিস–আদালতে অর্থাৎ সব জায়গায়। তাহলেই আমরা প্রকৃত মানুষ হতে পারবো। সকলেই আমাদেরকেভালোবাসবো।