Reading Guide

জাতীয় শোক দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য: ১৫ই আগস্ট

(15 August National Mourning Day) 15 ই আগস্ট বাঙালি জাতির শোক দিবস সম্পর্কে জানুন:

দ্বিধাবিভক্ত পরাধীন জাতিকে সুসংগঠিত করে নতনরূপে নেতৃত্ব দেওয়া সহজ কাজ নয়। অথচ এই কঠিন কাজটি খুব সহজেইকরতে পেরেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমান অসীম দক্ষতা যোগ্যতারপরিচয় দিয়েছিলেন।

বাঙালি জাতির জীবনে যে অল্প কয়েকজন মানুষ ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম এবং প্রদান ছিলেন বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান। তিরিশ লক্ষ বাঙালির রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশে তিনি হয়ে উঠেছিলেন মুক্তির প্রতীক।

অথচ সবার সেরা বাঙালির প্রাণপ্রিয় এই নেতাকে ঘাতকেরা কি নিষ্ঠুরভাবেই না হত্যা করলো ;সেই সাথে ঘাতকেরা শুধু একজনমানুষকেই হত্যা করেনি, হত্যা করেছে ১৬ কোটি বাঙালির স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে, হত্যা করেছে সমাজের নিরীহ, অত্যাচারিত, শোষিত, নির্যাতিত সকল মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার সত্য প্রতীককে। ঘাতকেরা বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের ইতিহাসেসবচেয়ে কালো অধ্যায় রচিত করেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরচিত্রকর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মাধ্যমে।

১৫ আগষ্ট আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস। এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং বাংলাদেশের স্থপতি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়।

দিবসটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুবই দুঃজনক এবং একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূত্রপাত করে।

এটি ছিল বিশ্বের  শ্রেষ্ঠ নিন্দনীয় অধ্যায়ের একটি। এই দিনে বাংলার মানুষ শুধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে হারাননিহারিয়েছেন বিশ্ব একজন শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক নেতাকে।

বঙ্গবন্ধুকে কেন হত্যা করা হয়েছিল?

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পিছনে অসংখ্য কারণ রয়েছে। দেশি বিদেশি নানান ধরনের  ষড়যন্ত্র প্রধানত দায়ী। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধেরপরাজিত শক্তি ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য স্বাধীন দেশে অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল?

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক বাহিনীর এবং সরকারের প্রশাসন যন্ত্রে অরাজকতা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। শুধু তাই নয়  বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশর সংবিধান স্থগিত করা হয় এবং হত্যা কারিদের পুরস্কৃত করা হয়।

সমগ্র বাংলাদেশের  জনগণের মৌলিক মানবাধিকার রাজনৈতিক সামাজিক অধিকার সমূহ ভূলুণ্ঠিত হয় যার ফলে দেশ বিদেশেরদেশ জাতির মান সম্মান মর্যাদা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।

খুনিরা কি সেদিন শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেছিল?

১৫ আগস্টে বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী বিশ্বাসঘাতক অফিসারদের হাতেই ভোর রাতে নিহত হন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা, বঙ্গবন্ধুরজ্যেষ্ঠপুত্র মুক্তিযোদ্ধা লে. শেখ কামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল রোজী কামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাইশেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত তার কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্তআবদুল্লাহ বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুরসামরিক সচিব কর্নেল জামিল আহমেদ এবং ১৪ বছরের কিশোর আবদুল নঈম খান রিন্টুসহ ১৬ জনকে ঘাতকেরা নির্মমভাবেহত্যা করে।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরতৎকালীনবাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হয়ে সামরিক শাসন জারি করে এবং ২২শে আগস্ট মুক্তিযুদ্ধেনেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করে। ২৪শে আগস্ট জেনারেল কে. এম. সফিউল্লাহকে সরিয়ে জেনারেল জিয়াউররহমানকে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত করা হয়। ৩১শে আগস্ট এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৫ই আগস্টের হত্যাকারীদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য ১৯৭৫সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর খন্দকার মোশতাকইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সনামে সংবিধান আইনের শাসনবিরোধীএকটি অধ্যাদেশজারি করে। ১৫ই আগস্টের হত্যার সঙ্গে জড়িত জুনিয়র সেনা অফিসাররা

ব্যারাকে ফিরে না গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনে বসে দেশ পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতে থাকে। এতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ সেনাবাহিনীর মধ্যে শৃঙখলা (চেইন অব কমাণ্ড) ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হন। ৩রা নভেম্বর তাঁরনেতৃত্বে এক সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। ৫ই নভেম্বর খন্দকার মোশতাক পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ৬ই নভেম্বরসুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি .এস.এম. সায়েম নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

১৫ আগস্টের দিনে কি কি আয়োজন করা হয়?

প্রতি বছরই আমাদের দেশে 15 আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এটি জাতির শোকাবহ দিবস। তাই এটিসরকারি বেসরকারি উদ্যোগে পালিত হয়ে থাকে। দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকার পাশাপাশি কালো পতাকা উত্তোলন কালোব্যাজ ধারণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু সহ যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মারমাগফেরাত কামনায় মিলাদ দোয়ার মাহাফিল অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশে মসজিদগুলোতে বাদজোহর বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামীলীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল সাড়ে ছয়টায় ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সকালসাড়ে সাতটায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত মিলাদ মাহফিল।সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ দোয়া মাহফিল। দুপুরে অসচ্ছল, এতিম দুস্থ ব্যক্তিদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা।

শেষ কথা,

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ছিল বাঙালি জাতির জীবনের একটি কালো অধ্যায়। তাই জাতি এই দিনটি শোকের মধ্যদিয়ে পালন করে। এই দিনটি দেশের ১৬ কোটি মানুষ গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে।

তিনি আজ আমাদের পাশে নেই তো কি হয়েছে ; রয়েছে তার স্মৃতি সেই স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে এই দেশের মানুষ দেখতে শিখেছেস্বপ্ন, বাস্তবায়ন করতে পেরেছে লক্ষ্যকে।

তাইতো কবির সশ্রদ্ধে উচ্চারণ,

যতদিন রবে পদ্মা যমুনা,গৌরি মেঘনা বহমান,

ততদিন রবে কীর্তি তোমার,শেখ মুজিবুর রহমান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button