Sports Guide

বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানোর নিয়ম কানুন ও সর্তকতা

শুরুতেই জানিয়ে দিতে চাই যে, আমি আজ আপনাদের সামনে বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানোর দশটি সর্তকতা এবং নিয়ম-কানুনের  টিপস  নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলোর উপর হয়তোবা আপনার জীবনের নিরাপত্তা নির্ভর করছে।

বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানোর নিয়ম কানুন টিপস এবং সর্তকতা(Rules and precautions for riding a bike in the rain)

  • মোটরসাইকেল চালাতে হেলমেট ব্যবহার করা
  • টায়ার প্রেসার কিছুটা কমিয়ে নেওয়া
  • সামনে অবস্থিত যেকোনো ধরনের গাড়ি থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা
  • ব্রেক করার সময় বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা
  • রাস্তার মাঝখানে থাকা সাদা দাগ থেকে দূরে থাকা
  • রাতের বেলায় সতর্ক থাকা
  • রাস্তায় পড়ে থাকা তরল(তেল) হতে সাবধানতা অবলম্বন করা
  • দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত পরিচিত রাস্তা ব্যবহার করা
  • বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় হাতে সময় নিয়ে বের হওয়া
  • অবশ্যই রেইন কোর্ট ব্যবহার করা।

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বছরের ছয়টা ঋতুর মধ্যে বর্ষা কাল একটু অন্যরকম। কারণ এই সময় রাস্তাঘাট সবসময়ই ভেজা থাকে। আপনি যদি একটু সর্তকতা নিয়ে এবং নিচে উল্লেখিত নিয়মকানুনগুলো মেনে চলেন তাহলে আপনার জন্য বর্ষা কাল ও হতে পারে রোদ্রউজ্জল কোন দিনের মতো আনন্দদায়ক।

বৃষ্টি পড়ছে রাস্তাঘাট সব ভেজা আপনি এখন ভাবছেন বৃষ্টির এই দিনে বাইক নিয়ে কিভাবে বাড়ি থেকে বের হবেন এবং কাজে যাবেন। দুশ্চিন্তার কিছু নেই মনোযোগ দিনএবং  মাথা ঠান্ডা রাখুন দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। চলুন তাহলে কিছু বাড়তি সতর্কতা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে আলোচনা শুরু করি।

যদি আপনি খুব বেশি সময় ধরে বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালান তাহলে আপনি ভিজে যাবেন। তাই দ্রুত আর দেরি না করে একটি রেইন গিয়ার কিনে ফেলুন তার দাম যতই হোক না কেন আপনাকে কিনতে হবে যার ফলে আপনি আরামের সাথে বাইক চালিয়ে বৃষ্টিতে কম ভিজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারবেন অথবা আপনি আপনার কর্মস্থলে যেতে পারবেন।

১. মোটরসাইকেল চালাতে হেলমেট:

বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানোর সময় আপনি লক্ষ্য করুন আর নাই করুন আপনার শরীর ঠান্ডা হয়ে যার ফলে বাইরের দিকে মনোযোগ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে যার ফলে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যায়। বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানোর সময় আপনাকে প্রথমত যে জিনিসটি লক্ষ রাখতে হবে সেটি হচ্ছে দৃষ্টি পরিষ্কার রাখা কারণ বৃষ্টির পানিতে সবকিছু 

ঠিক ভাবে দেখা যায় না সবকিছু ঝাপসা দেখায়। এর জন্য আপনি আইকন হেলমেট ব্যবহার করতে পারেন যা বৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে ।আর এই হেলমেট এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অ্যান্টি-ফগ অর্থাৎ বৃষ্টির ফলে আপনার দৃষ্টি ঝাপসা হবে না। তাছাড়া যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে মাথাকে সুরক্ষিত রাখতে হেলমেটের প্রয়োজন কতটুকু তা সকলেরই জানা আছে।

.প্রেসার কমিয়ে নেওয়া:

যদিওবা আপনি স্বাভাবিক সময় ব্যাটম্যানের  মতো খুব স্পিডে বাইক চালান, বর্ষার সময় আপনাকে টায়ারের প্রেসার কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে ।যার ফলে আপনি ভেজা রাস্তায় অনেক বেশি টায়ার গ্রিফ পাবেন। এই ধরুন স্বাভাবিকের তুলনায় 5 থেকে 10 পিএসআই। বর্ষার এই সময়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য এইটুকু কম্প্রোমাইজ তো করতেই হবে আপনাকে।

৩. অবস্থিত যেকোনো ধরনের গাড়ি থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা:

বর্ষাকালে রাস্তা পিচ্ছিল থাকার কারণে নানান ধরনের দুর্ঘটনার কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি ।অনেকে হয়তো নিজের স্বচক্ষে দেখেছিও। বাইক দুর্ঘটনা তার মধ্যে অন্যতম। তাই আপনার সামনের গাড়ি থেকে আপনার বাইকের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখুন। বিশেষ করে বড় ধরনের যানবাহন।

৪. ব্রেক করার সময় বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা:

বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বর্ষাকালে ব্রেক করার ক্ষেত্রে একটু বেশি সাবধানতা অবলম্বন করুন , কারণ রাস্তাঘাট এই সময় খুব বেশি পিচ্ছিল থাকে। তাই স্বাভাবিক সময় যে গতিতে বাইক থামান বর্ষাকালে তার দ্বিগুণ সময় নিয়ে বাইক থামান। বর্ষার দিনে রাস্তার ফিকশান কম থাকে। যার কারণে আপনি যদি দ্রুত ব্রেক করেন ভেজা রাস্তায় ফিকশন কম থাকার কারণে আপনি আপনার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যেতে পারেন। আর একে বলা হয় পিস টেল। যার ফলে আপনার বাইকের পেছনের চাকা মাছের লেজের মতো দুলতে থাকবে এবং হ্যান্ডেল সোজা রাখা আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। যদি কখনো পিস্টেলের কবলে পড়ে যান তাহলে দ্রুততার সাথে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করবেন এবং সেন্টার অফ গ্রাভিটি পরিবর্তন করে সাথে সাথে বাইক নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবেন।

৫. রাস্তার মাঝখানে থাকা সাদা দাগ থেকে দূরে থাকা:

আমরা প্রত্যেকেই জানি যে রাস্তার মধ্যে রাস্তার বিভাজনের জন্য মাঝখানে সাদা দাগ দেয়া থাকে। বৃষ্টির দিনে এই দাগ খুবই পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। তাই আপনাকে বৃষ্টির দিনে সাদা দাগের উপরে বাইক চালানো এবং ব্রেক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এই সাদা দাগ সাধারণ রাস্তা থেকে অনেক সময় বেশি পিচ্ছিল হয়ে পড়ে।

৬. রাতের বেলায় সতর্ক থাকা:

এমনিতেই দিনে বৃষ্টির মধ্যে নানান ধরনের বিপদের সম্ভাবনা থাকে। আর রাতের বেলায় এই সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। যদি রাতের বেলায় বৃষ্টির পানি আপনার হেলমেটের গ্লাসে পড়ে আপনি ঠিকভাবে সামনের দৃশ্য দেখতে পাবেন না অর্থাৎ আপনার দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হবে। আর হঠাৎ যদি বিপরীত দিক থেকে কোন গাড়ির আসে সেই গাড়ির আলো আপনাকে অনেক বড় বিপদে ফেলে দিতে পারে ।তাই আপনি ইন্ডিকেটর লাইট ব্যবহার করতে পারেন। যার ফলে বিপরীত থেকে আসা গাড়ি সর্তকতা অবলম্বন করবে। আর যদি আপনি লো বিম এ হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে বাইক চালান তাহলে সেটাই আপনার জন্য মঙ্গলজনক হবে।

৭. রাস্তায় পড়ে থাকা তরল(তেল) হতে সাবধানতা অবলম্বন করা:

আমরা অনেক সময় দেখি যে রাস্তার মধ্যে অনেক তৈলাক্ত পদার্থ পড়ে থাকে। ভেজা অবস্থায় রাস্তায় তৈলাক্ত পদার্থ বরফের মত পিচ্ছিল হয়। যদি আপনি তার উপর দিয়ে বাইক চালান আপনি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই আপনি বৃষ্টি থেমে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর বাড়ি থেকে বের হতে পারেন। যদি আপনার খুব বেশি প্রয়োজনীয় কাজ থাকে তাহলে আপনি সর্তকতা অবলম্বন করতে পারেন যেমন ধরুন, বাইকের গতি কমিয়ে যে স্থান দিয়ে তৈলাক্ত পদার্থ কম রয়েছে এই স্থান দিয়ে আপনি আপনার বাইক চালিয়ে নিতে পারেন। তবে এটি খুব বেশি কার্যকর নয়।

৮. দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত পরিচিত রাস্তা ব্যবহার করা:

পরিচিত এবং অপরিচিত রাস্তার পার্থক্য আমরা সকলেই জানি। পরিচিত রাস্তার খাদ-খন্ড আমাদের সকলেরই চেনা জানা থাকে। কিন্তু অপরিচিত রাস্তা আমাদের চেনা থাকেনা । অপরিচিত রাস্তারখাদ খন্ড আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। তাই আমাদের সবসময় উচিত পরিচিত রাস্তা ব্যবহার করা।

৯. বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় হাতে সময় নিয়ে বের হওয়া: 

বর্ষার দিনে বৃষ্টি হয় বলে তো আর কাজকর্ম থেমে থাকবে না। কাজের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে সঠিক সময়ে পৌঁছাতে হবে।তাই আপনাকে এমন ভাবে প্রস্তুত হয়ে থাকতে হবে যেন আপনি সঠিক সময় আপনি আপনার কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেন। আপনাকে অবশ্যই আপনার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় নিয়ে বের হতে হবে। কারণ আপনি স্বাভাবিক যে গতিতে গাড়ি চালান বর্ষাকালে তার থেকে 10 থেকে 20 শতাংশ কম গতিতে আপনাকে গাড়ি চালাতে হবে। যদি আপনি আপনার কর্মস্থলে পৌঁছার আগে পথে বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

১০. অবশ্যই রেইন কোর্ট ব্যবহার করা:

বর্ষার সময় আপনাকে অবশ্যই কোন না কোন কারনে বাইক নিয়ে বাইরে বের হতেই হবে। সেটা হতে পারে বাজারে যাওয়া অথবা কর্মসংস্থানে যাওয়া। বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই রেইন কোর্ট নিয়ে বের হবেন। খেয়াল রাখবেন কোর্টটি যাতে স্বচ্ছ হয়।

উপরে উল্লেখিত সতর্কতাসমূহ যদি আমরা অবলম্বন করি খুব সহজেই বিপদ মোকাবেলা করতে পারব। চলুন তাহলে আর দেরি কিসের বর্ষার রোমাঞ্চকর মুহূর্ত টা কে আমরা অনুভব করি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button