bigganider kando karkhana 3 pdf | বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা ৩ by রাগিব হাসান
বইয়ের নাম |
বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা ৩ |
লেখক |
রাগিব হাসান |
প্রকাশনী |
আদর্শ |
পেজ |
১২৮ |
দেশ |
বাংলাদেশ |
Edition |
1st Published , 2020 |
ভাষা |
বাংলা |
বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা –৩ ” বইটি সম্পর্কে কিছু কথা : আগের দুই খণ্ড প্রকাশিত হবার পরে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে আগামীপ্রজন্মের কাছ থেকে । তাই এবারে বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা –৩ এ আরো ১৫ টি গল্প । এই গল্পগুলো আসলে বিশ্বের চেহারাপাল্টে দেয়া সব আবিষ্কার ও তার সাথে জড়িত বিজ্ঞানীদেরই গল্প ।
বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা –৩ এর মধ্যে যে যে বিষয় গুলো আলোচনা করা হয়েছে:
- নোবেলের স্বপ্ন
- মেন্ডেলের মটরশুটি
- গণিতের রাজা– পল আরডিশ
- শ্রোডিংগারের বিড়াল
- প্রফেসর গড়ার্ডের স্বপ্নের রকেট
- আকাশছোঁয়া ফজলুর
- সালামের মহাবিশ্ব
- কৌতূহলী দ্য মেস্ট্রাল ও তার কুর সেই কাঁটাময় আবিষ্কার
- আইনস্টাইনের কম্পাস
- পিথাগোরাস— শুদ্ধ গণিতের পূজারী
- রাধানাথের আঁকজোক
- কাসিমিরের কবুতর
- লাজুক উদ্ভাবক , সাহসী বউ : এ জার্নি বাই কার ১৮৮৮
- অন্ধজনে দেহ আলো– ব্রেইলের লিপি
- হেডি লামার বিশ্বসুন্দরী চিত্রনায়িকা যখন উদ্ভাবক
- জীবনকণিকা
নোবেলের স্বপ্ন
আলফ্রেড নোবেল বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানীদের জন্য সবচেয়ে সম্মানের পুরস্কার হলো। নোবেল পুরস্কার । পদার্থ , রসায়ন ওচিকিৎসাবিজ্ঞান ছাড়াও শান্তি , সাহিত্য ও অর্থনীতিতে দেওয়া হয় নোবেল । কিন্তু এই পুরস্কারের বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা
নামটা এল কোথা থেকে ? সবকিছুর মূলে আসলে আছে একটি দুর্ঘটনা , একটি বিস্ফোরণ এবং একতাল কাদামাটি । কীভাবে ? জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৬৪ সালে । পলকা বিস্ফোরক আর একটি দুর্ঘ না নােবেল পুরস্কারের প্রবর্তক হলেনসুইডিশ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী আলফ্রেড নোবেল । জন্ম ১৮৩৩ সালে । বাবার ছিল অস্ত্রের কারখানা । কিন্তু ব্যবসায় মন্দাযাওয়ায় সেটা লাটে ওঠে । ভাবলেন , বিস্ফোরকের ব্যবসায় নামা যেতে পারে । এহেন বিস্ফোরক যে কেবল যুদ্ধে ব্যবহৃত হয় তানয় , পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোসহ আরও অনেক শান্তিপূর্ণ কাজে বিস্ফোরকের দরকার হয় ।
অনেক দিন ধরে একমাত্র বিস্ফোরক ছিল বারুদ বা গানপাউডার । কিন্তু তার শক্তি খুব বেশি নয় । ১৮৪৬ সালে ইতালীয়রসায়নবিদ সোব্রেরো আবিষ্কার করেন প্রচণ্ড শক্তিশালী এক বিস্ফোরক তরল নাইট্রোগ্লিসারিন । সেটা বানানো হতো গ্লিসারিনেরমধ্যে নাইট্রিক অ্যাসিড ঢেলে । বিস্ফোরক হিসেবে এর শক্তি ছিল বারুদের চেয়ে অনেক বেশি । তবে সমস্যাটা অন্য জায়গায় , নাইট্রোগ্লিসারিন ছিল খুব অস্থিতিশীল তরল । একটা মাছি উড়ে গিয়ে এর মধ্যে পড়লেও বিস্ফোরিত হয় । অথবা একচিলতেসূর্যের আলোর তাপেও এটা বিস্ফোরিত হতে পারে ।
ফলে এটা ব্যবহার করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটা ছিল নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার । ১৮৬২ সালে নোবেল নাইট্রোগ্লিসারিন বানানেরকারখানা খুললেন । কী করে নাইট্রোগ্লিসারিনের অস্থিতিশীল অবস্থাটা ঠিক করা যায় যাতে করে দুর্ঘটনাবশত বিস্ফোরণ না ঘটে, তা নিয়ে নোবেল গবেষণা করতে লাগলেন । কিন্তু বিধি বাম । ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার ল্যাবে নাইট্রোগ্লিসারিনের পাত্রেহঠাৎ বিকট বিস্ফোরণ ঘটল । মারা গেল পাঁচজন । তাদের মধ্যে নোবেলের ছোট ভাই এমিলও ছিল । ভাইয়ের শোকে মুষড়েপড়লেন নোবেল । কাজ বন্ধ থাকল কিছুদিন । তার পর কীভাবে নিরাপদ করা যায় এই
নাইট্রোগ্লিসারিনকে , তার উপর নতুন প্রত্যয়ে গবেষণা করতে লাগলেন ।সৌভাগ্যময় দুর্ঘ না নোবেলের ভাগ্যটা পাল্টে গেলআরেকটি দুর্ঘটনায় ।
একদিন ল্যাবে 1 কাজ করার সময় হাত ফসকে এক বোতল নাইট্রোগ্লিসারিন পুরোটা পড়ে গেল ল্যাবের মেঝেতে । আঁতকেউঠলেন নোবেল । লাফ দিয়ে লুকালেন নিরাপদ দূরত্বে । ভালো করেই জানেন , কতটা মারাত্মক এই বিস্ফোরক তরল । কিন্তু একী ! কোনো বিস্ফোরণ তো ঘটল ! দুরুদুরু বুকে তাকিয়ে দেখলেন , ল্যাবের মেঝেতে পড়ে থাকা একরকমের আঠালো বালি শুষেনিয়েছে নাইট্রোগ্লিসারিনের রোটা তরল । ফলে নাইট্রোগ্লিসারিন আর বিস্ফোরিত হয়নি ।
তো, ল্যাবের মেঝেতে এই বালি এল কোথা থেকে ? ভালো করে খয়াল করে দেখলেন নোবেল । আরে , এটা তো কাইজেলগুড়নামের বালিমাটির দলা । কয় দিন আগে বাক্সে করে নাইট্রোগ্লিসারিনের বোতল আনা হয়েছিল ল্যাবে , সেই বাক্সের ভেতরেবোতলগুলো তে নড়াচড়া কম করে সে জন্য এই বালি দেওয়া হয়েছিল । বোতল বের করার সময়ে মেঝেতে পড়ে গেছে । ঝাড়দারকয় দিন না আসায় সাফ করা হয়নি মেঝে । নোবেলের চোখ চকচক করে উঠল । নাইট্রোগ্লিসারিন তরল অবস্থায় খুবইবিপজ্জনক , সহজেই বিস্ফোরিত হয় । তাই পরিবহন করা বা কোথাও গুদামে র খাটা খুব বিপ নক ।
কিন্তু এই বালিমাটিতে শুষে যাওয়ার পরে এটা একেবারে নির্বিষ হয়ে যায় যেন । হাত থেকে মেঝেতে পড়ে গেলেও এই বালিমাটিতেশুষে যাওয়া নাইট্রোগ্লিসারিনের কিছু হয় না । কিন্তু আবার বিস্ফোরণের ক্ষমতা লোপও পায় না । আগুন ধরালে বা ডেটোনেটরদিয়ে বিস্ফোরণের সূত্রপ ত করলে ঠিকই বিস্ফোরণ ঘটে । নোবেল নানা রকমের পরীক্ষা – নিরীক্ষা করে বুঝে গেলেন , কীঅনুপাতে নাইট্রোগ্লিসারিন আর বালিমাটি মেশালে সেটা নিরাপদ কঠিন বিস্ফোরকে পরিণত হবে । আর নাম দিলেনডায়নামাইট ( Dynamite )।